Monday, September 12, 2011

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এর দানব


বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড, দেশের সাধারণ জনগনের মানবাধিকার এর বিষয়টিতে একটি বড়সড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে| দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ জনগনের নজরে এসেছে, তাতে আমাদের দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতা প্রসঙ্গে আরেকবার বেশ ভালো ভাবে বিবেচনা করার সময় এসেছে বলে মনে হয়| আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে দেশের পুলিশ ও রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন (RAB) এর কার্যক্রম সবসময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে| দেশের সাপ্রতিক কিছু ঘটনায় বর্তমানে দেশে পুলিশের কার্যক্রম তাদের অতীত ইতিহাসকে ছাড়িয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম পর্যায়ে অবলোকন করা গেছে| বাংলাদেশ যখন দুর্নীতির দায়ে বারংবার বিশ্বে এক নাম্বারে স্থান পাচ্ছিলো তখনও বিভিন্ন কমিটির রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা গেছে, দেশের সর্বচ্চো দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এই পুলিশ| তত্কালীন ক্ষমতাসীন সরকার পুলিশের ভাবমূর্তি বদলানোর জন্য তখন তাদের পোশাক পরিবর্তন করলেও এসব দুর্নীতির প্রশ্নে ছিলো চুপ, কোনো ধরনের কমিটির মাধ্যমে এই অভিযোগ গুলো যাচাই করার নুন্যতম প্রচেষ্টাও দেখা যায়নি| পোশাক বদল হলে কি হবে, পোশাক যে পরিধান করছে সে অপরিবর্তনীয় থাকায় যেই লাউ, সেই কদুই থেকে গেছে|

তত্কালীন ক্ষমতাসীন সরকার আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি রোধ করতে এবং জঙ্গি দমনের লক্ষে ২০০৪ সালের মার্চ মাসে গঠন করে RAB| বিভিন্ন সামরিক বাহিনী থেকে সদস্য সংযোজন করে গঠন করা এই বিশেষ বাহিনী উন্নত ট্রেনিং ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাঠে নামে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে| তখনকার ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনা এলাকায় বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা গিয়েছিলো, এই জায়গাগুলোতে ঝটিকা কিছু অভিযানের মাধ্যমে RAB বিশেষ সাফল্য দেখায়| বেশ কিছু স্মাগলিং রিং এবং চরমপন্থী বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অপারেশন সত্তি প্রশংসাযোগ্য| কিন্তু সমস্যা তৈরী হয় তার পরে, তত্কালীন সরকার সামাজিক ভাবে আইন শৃখলা পরিস্থিতি ঠিক করতে ব্যার্থ হয়ে, বিভিন্ন ভাবে RAB ও পুলিশকে দিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাটাকেই একমাত্র পথ বলে গ্রহণ করে| RAB এর ক্ষমতা বাড়িয়ে দাওয়া হয় বহুগুন, এবং একের পর এক ক্রস ফায়ার এর ঘটনায় সন্ত্রাসীর মৃত্যু হতে থাকে| তত্কালীন পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ জনগণ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই পথকে সমর্থন দিলেও, এর আরেকটি দিক চোখ এড়িয়ে যায়| বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছড়ানো ছেটানো ভাবে কিছু অপ্রাসঙ্গিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা চোখে পরলেও দেশের সুশীল জনগণ চোখ বুজে সেটা সহ্য করে যান এই ভেবে যে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তো হাফ ছেড়ে বাঁচা যাচ্ছে| স্কুলের বাচ্চাদের স্কুল বাস থেকে নামিয়ে প্রচন্ড রোদে কান ধরে উঠা বসা করানো, কোনো ভুল বোঝা বুঝিতে কাউকে অযথা পেটানো কিংবা কোনো অপারেশনে নিরীহ মানুষের মৃত্যু তখন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সকল দিক থেকেই| একের পর এক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা চোখে পরলেও এর বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া তো দুরে থাক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ধামা চাপা দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে| তখন সুশীল সমাজের কারো কারো এরকম বক্তব্য ছিলো যে সন্ত্রাসীদের আবার কিসের মানবাধিকার?

কিন্তু এই ধরনের বিছিন্ন কিছু ঘটনা আসলে ভবিষ্যতের যে মানবাধিকারের চরম বিপর্যয়ের ঘটনার হাতছানি ছিলো মাত্র, তা আমাদের অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেছে| বরং RAB এর মতো দুর্দান্ত ও সক্রিয় একটি বাহিনী থাকায় আমরা অনেকেই খুশি হয়েছি| এই সংস্থাটির কার্যক্রম জঙ্গি দমনে ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখলেও, একই সাথে লাগামহীন বিচার বহির্ভুতু হত্যাকান্ডের জন্য প্রশ্নের উর্ধে নয়| আর সরকারী ভাবে এই ঘটনা গুলোর প্রতি কোনধরনের আইনি কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি, এমনকি এখন পর্যন্ত বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য সেরকম ভাবে কাওকে দোষীসাব্যস্থ করে আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি|

এইবার দেখা যাক শুরু থেকে RAB এর কিছু কার্যক্রমের তথ্য, Amnesty International এর পরিসংখানের ভিত্তিতে প্রতিষ্টার পর থেকে RAB ৭০০ রও বেশি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, যার মধ্যে কমপক্ষে ২০০ বর্তমান সরকারের আমলে| কিন্তু এই হত্যাকান্ড গুলোর প্রায় সবকটাতেই যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তা হয়েছে RAB এর পক্ষ থেকে নয়তো সরকারের পক্ষ থেকে, কোনটাতেই তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রমানাদি জনগনের সামনে প্রকাশ করা হয়নি, সাধারণ ভাবে কোনটাতেই কোনো বাহিনীর কর্মরত সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি| আর বেশিরভাগ হত্যাকান্ডকে ক্রস ফায়ার অথবা বন্দুক যুদ্ধের নামে সাজানো হয়েছে| দুক্ষজনক হলেও সত্তি, RAB এর হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কালে সন্ত্রাসীর হাতে অস্ত্র কি করে আসলো বা সেই অস্র দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সে গুলি করার সময় কখন পেলো এই নিয়ে কারো মনেই কোনো প্রশ্ন জাগেনি| শুধুমাত্র জানুয়ারি ২০১০- জুন ২০১১ এর মধ্যে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আহত বা নিহত মানুষের সংখ্যা হচ্ছে কোস্টগার্ডের হাতে ২ জন, পুলিশের হাতে ৪৯ জন এবং RAB এর হাতে ১৩১ জন যার মধ্যে নিহত হয়েছেন RAB এর হাতে ৯৩ জন, পুলিশের হাতে ৩০ জন এবং ২ জন অন্যানদের হাতে|

RAB এর বিভিন্ন অপারেশনের দিকে যদি দেখা যায় তাহলে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, জানুয়ারি ২০১০- জুন ২০১১ এই সময়ের মধ্যে তাদের হাতে আহত অথবা নিহত মানুষের সংখ্যা বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিতে, ঢাকা- ৯২ জন, খুলনা- ৪২ জন, রাজশাহী- ২১ জন, বরিশাল- ১৩ জন, চট্রগাম - ১১ জন, সিলেট- ২ জন এবং রংপুরে ১ জন| কিন্তু কোনো হত্যাকান্ডেরই সঠিক ভাবে বিচার বিভাগীয় কোনো তদন্ত হয়নি, সরকারের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কোনো চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়নি|

এবার কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার দিকে তাকাই,
১.৩ জুন, ২০১১ নরসিংদিতে রহিমা খাতুন নামে একজন মহিলা মাথায় গুলিবিদ্ধ হন, RAB এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তার স্বামীকে গ্রেফতার করার সময় ভুল বোঝা বুঝিতে এই ঘটনা ঘটে, গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, এই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি|

২.জুন ২০১০ এ ঢাকাতে গার্মেন্টস কর্মীদের এক প্রতিবাদে RAB মারধর করে, কিন্তু এই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি|

৩.২৩ মার্চ, ২০১১ ঝালকাঠিতে লিমন হোসাইন নামক ১৬ বছরের এক যুবক পায়ে গুলিবিদ্ধ হন| সাংঘাতিক আঘাতের কারণে পরবর্তিতে তার পা কেটে বাদ দিতে হয়| এই ঘটনার সুষ্ট কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি| RAB এর পক্ষ থেকে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুক যুদ্ধের সময় লিমন মাঝখানে পড়ে গিয়েছিলো, কিন্তু পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে বারবার ইচ্ছাকৃত ভাবে লিমনকে সন্ত্রাসীদের সাথে সংযুক্ত করার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে| এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জনগনের জন্য প্রকাশ করা হয়নি|

৪.নাসির আহমেদ,আসাদুল হক শাহীন মারা গেছেন RAB এর ক্রস ফায়ারে|

৫.মোহাম্মদ ইদ্রিস মারা গেছেন পুলিশের অত্যাচারে|

৬.সাংবাদিক মাসুম ফকির ২২ অক্টোবর, ২০০৯ RAB এর হাতে গ্রেফতার হন, পরবর্তিতে অত্যাচারের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন|

৭.২৪ অক্টোবর,২০০৯ রবিউল ইসলাম খুলনাতে RAB এর হাতে গ্রেফতার হন| তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় অমানবিক অত্যাচার করা হয়|

৮.১৬ মার্চ,২০১০ আসাদুজ্জামান রুবেল কে গুলি করে হত্যা করে RAB, কিন্তু পবর্তীতে তদন্তে দেখা যায় তার সাথে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের যোগসূত্র ছিলো না|

৯.কিছুদিন আগে পুলিশের গাড়ি থেকে উগ্র জনতার হাতে নামিয়ে দেওয়া এক যুবক কে পিটিয়ে হত্যা করার দৃশ্য মোবাইল ফোন এর বদৌলতে ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র বিশেষ করে ইন্টারনেট এ|

১০.কিছুদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণকে সেগুনবাগিচা নাট্যমঞ্চের সামনে থেকে রাতের বেলা তুলে নিয়ে ছিনতাইকারী অভিযোগে অত্যাচারের পর প্রায় পঙ্গু করে দেয় পুলিশ, পরবর্তিতে যার সাথে তার সহপাঠি বা আত্মীয় দেখা করতে গেলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি| পরে তদন্তে প্রকাশ পায় সে তার বোনের বাসা থেকে হলে ফিরছিলো| এর দায়ভার অস্বীকার করে পুলিশ|

অনেক ঘটনার মাঝে থেকে উপরে উল্লেখিত এই কয়টি ঘটনা শুধুমাত্র নমুনা বিশেষ| এই ঘটনা গুলোর না হয়েছে কোনো সুষ্ট তদন্ত, না হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ| এভাবেই একের পর এক বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ড ও হত্যা কান্ড থেকে পার পেয়ে গেছে দেশের পুলিশ ও RAB| RAB এর হাতে গ্রেফতারকৃত অধিকাংশই অভিযোগ করেছেন চরম অমানবিক শারীরিক অত্যাচারের| যার মধ্যে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা থেকে শুরু করে বৈদ্দুতিক শক পর্যন্ত ছিলো| এই ঘটনা গুলোর কোনটাতেই সাক্ষ্য প্রমান থাকা সত্তেও কোনো ধরনের তদন্ত হয়নি|

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটি সভ্য স্বাধীন দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর যাই হউক না কেন, দেশের সকল আইনের উর্ধে নয়| তাদের হাতে গ্রেফতার কৃতরা সন্ত্রাসী হউক আর সাধারণ নাগরিক হউক তারাও আইনের অধীনে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুষ্ট তদন্তের অধিকার রাখে| আমরা আমাদের লাগামহীন সামাজিক ও আইন শৃঙ্খলার অধপতন ঠেকাতে যদি দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ড অব্যাহত করতে দেই, তারই সাথে যদি এই কাজগুলোর কোনো ধরনের সুষ্ঠ তদন্ত না হয়, সরকারের তরফ থেকে যদি এর দায়ভার অস্বীকার করা হয়, তাহলে আমরা আস্তে আস্তে গল্পের ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এর দানব এর মতই একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেশে তৈরী করবো, যার প্রভাব ধীরে ধীরে আমদের সাধারণ সমাজে আরও ভয়াবহ হবে|তাই আর যাই হউক না কেন, কোনভাবেই এই বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ডকে সমর্থন করা যায় না|

২০১০ সালে, উইকিলিকস এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্রিটিশ পুলিশদের মাধ্যমে ট্রেনিং ও এই বিষয় গুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু গোপনীয় চুক্তি ও পদক্ষেপ প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসেন কর্তারা| তার পরেই ব্রিটেন ভবিষ্যতে আর ট্রেনিং কার্যক্রম চালাবেনা বলে ঘোষণা দেয়| এরই সাথে Austria, Belgium, China, Czech Republic, Italy, Poland, Russian Federation, Slovakia, Turkey and USA এইসব দেশ থেকে যে প্রচুর অস্ত্র আমদানি করা হচ্ছে RAB এবং পুলিশের জন্য সে দিকেও নজর পরে মানবাধিকার সংগঠন গুলোর| Amnesty International এর মতে, যে সংস্থা একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় এই দেশ গুলোর উপরেও বর্তায়|

বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম নির্বাচনী ইশতেহার ছিলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সকল বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ড বিচার বিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনা এবং সুষ্ট ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, যার কোনো ফলপ্রসু উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি| আগে তো RAB ছিলো এখন তার সাথে সাথে দেশের পুলিশও ক্রস ফায়ারে হত্যাকান্ডকে তাদের ফ্যাশনে পরিণত করতে চলেছে, তার সাথে গ্রেফতার এর পরে সন্ত্রাসীকে উগ্র জনতার হাতে ছেড়ে দেওয়াটা এখন তাদের ট্রেডমার্ক স্টাইল এ পরিণত হয়েছে| একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনভাবেই বিচার বহির্ভূত হত্যা কান্ডকে সমর্থন করা যায়না, আর বিনা বিচারে হত্যা কোনভাবেই দেশের আইন শৃঙ্খলার উন্নতি করতে পারেনা| সরকার, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনভাবেই এই ঘটনা গুলোর দায় এড়িয়ে যেতে পারেনা| নয়তো তাদের তৈরী ফ্রাঙ্কেনস্টাইন যে তাদের উপরই চরাও হবেনা তা বলা যায় কি?

সকল বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ড ও হত্যাকান্ড অতি সত্তর বন্ধ করে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করে সচ্ছ তদন্ত জরুরি| একই সাথে এর কার্যক্রম সাধারণ জনগনের সামনে উন্মুক্ত করাটাও সরকারের ও বিচার বিভাগের দায় বদ্ধতার মধ্যে পড়ে| দোষীদের বিচার ও আক্রান্তদের সাহায্য ও সহযোগিতা এবং এই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য সঠিক সিদ্বান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অতি জরুরি| মানবাধিকার চরম লঙ্ঘনের অভিযোগে এরই মধ্যে Amnesty International বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, এছাড়াও আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারী সংস্থা থেকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে আশংকা ব্যাক্ত করা হয়েছে, U.S Department of State: Human Rights Report 2011-এ দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় গুলোকে এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে|

বহু বছর ধরে এই ঘটনা গুলো নিয়ে অনেক পানি ঘোলা করা হয়েছে, অতি পুরাতন প্রশ্ন "রক্ষকই ভক্কক" নিয়ে জনসাধারণ অনেক মাথা ঘামিয়েছে, কিন্তু যদি এই সমস্যা গুলো নিয়ে জনসচেতনতা তৈরী না হয় তাহলে যে দানব তৈরী হচ্ছে দিনে দিনে তার দানবিকতা ভবিষ্যতে কতদূর পর্যন্ত গড়াবে তার কথা কে বলতে পারেন? আজকে যেই বন্দুকের নল সন্ত্রাসীদের দিকে তাক করা হচ্ছে, তা যে কদিন পড়ে আমার বা আপনার দিকে তাক করা হবেনা তা গ্যারান্টি দিয়ে কে বলতে পারে?



http://www.amnesty.org/en/news-and-updates/report/bangladesh-government-must-act-now-stop-police-unlawful-killings-2011-08-23

http://www.amnesty.org/en/library/asset/ASA13/005/2011/en/c18ad74b-75fe-4b15-b043-5982eebdb27d/asa130052011en.pdf

http://www.extrajudicialkilling.info/

http://www.guardian.co.uk/world/2011/jan/26/bangladesh-death-squad-killings-britain

No comments:

Post a Comment