Saturday, May 26, 2012

চলচ্চিত্র: দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার


the-flowers-of-war-poster

নাম: দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার
দৈর্ঘ্য: ১৪৬ মিনিট
বিষয়: নানকিং ম্যাসাকার, ধর্ষণ, চীন-জাপান যুদ্ধ
পরিচালক: ইমও জহাং
দেশ: চীন
ভাষা: চাইনিজ (নানকিং প্রাদেশিক), ইংরেজি

যুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রে বরাবরই আগ্রহ বেশি, বেশিরভাগ সময় চেষ্টা করি এধরনের প্রেক্ষাপটে তৈরী ভালো চলচ্চিত্রগুলো সংগ্রহে রাখতে। এরকম অনেক ভাষার চলচ্চিত্র সংগ্রহে রাখার একটি সুবিধে হচ্ছে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধকালীন সময়কে যাচাই করা। মানুষের ক্রোধ-ভালোবাসা, জীবন-মৃত্যু এরকম অসংখ্য অনুভূতি ও পরিস্থিতিগুলোকে একই জায়গায় পরস্পরের বিপরীতে রেখে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। মিশ্র অনুভূতির এই জটিল রসায়ন বিশ্লেষণে, একটি ভালো চলচ্চিত্রের থেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম আর কি হতে পারে।

যেকোনো যুদ্ধে নারী এবং শিশু সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নারীদের সব থেকে বেশি নির্যাতনও ভোগ করতে হয়। ইতিহাসে এর অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থিত। "মাস রেপ"- ধর্ষণ, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মানসিক মারনাস্ত্র। এর নিকৃষ্ট প্রয়োগ বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সব জায়গাতেই লক্ষনীয়। নারীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করেই শুধু নয়, এর প্রয়োগ প্রতিপক্ষের মনোবল ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। এরকমই ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হচ্ছে "নানকিং ম্যাসাকার", ইম্পেরিয়াল জাপান কর্তৃক চীনের নানকিং প্রদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও ধর্ষণ পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে ভয়ঙ্কর, যুদ্ধকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উধাহরণ। এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়, যার মধ্যে নারীরা শিকার হয় গণধর্ষণ ও হত্যার। ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন চীনের প্রায় তিন লক্ষ-চার লক্ষ মানুষ এই সময়টিতে জাপানের আগ্রাসী সৈন্যবাহিনীর হাতে নির্যাতনের পরে মৃত্যুবরণ করে। এই ইতিহাস সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা ছিলো, চলচ্চিত্রটি দেখার পরে হতবাক হয়ে রইলাম। পরিচালক অসাধারণ দক্ষতায় মানবিকতার চরম বিপর্যয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ১৪৬ মিনিট সময়টুকুর মধ্যে। এক মুহুর্তের জন্যও পর্দা থেকে চোখ ফেরানো দুষ্কর।

220px-The_Flowers_of_War_english_poster

একগাদা চলচ্চিত্রের মাঝখানে ঘাটতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো এটি, শুরু করে একটু এগিয়ে এগিয়ে দেখতে গিয়ে চোখ আটকে গেলো। স্থির করতেই হলো না দেখলেই নয়। ১৯৩৭ সালের চীন-জাপান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটিতে অসংখ্য চরিত্রের মিশেলে ফুটে উঠেছে সেই সময়ের মানুষের নানান অনুভূতিগুলো। প্রিয় অভিনেতা ক্রিস্চিয়ান বেএল দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন আবারও। তার চরিত্রটির উপর ভর করে কাহিনী এগিয়েছে অদ্ভুত একটি গতিতে।
কখনো মানুষের ভালোলাগা-খারাপলাগার অনুভূতিতে চরিত্রগুলো হয়ে গেছে অনেক আপন, কখনো আলাদা আলাদা ভাবে চরিত্রগুলো নিয়ে গেছে এক অদ্ভুত ঘোরলাগা পরিবেশে। মানুষের ভালো-মন্দ দিকগুলো উঠে এসেছে অকৃপণভাবে, একটা সময় দর্শক নিজে থেকেই লক্ষ্য করবে চরিত্রগুলো তাদের অতি সাধারণ খোলস থেকে বের হয়ে একটি অসাধারণ উচ্চতায় নিজেদেরকে নিয়ে গেছে, যেখানে মানুষের ভালো-মন্দ এক হয়ে একটি আলাদা জগৎ তৈরী হয়েছে।

প্রধান পাঁচটি চরিত্র আলাদা করা যায় পুরো সময় থেকে, যাদের গুরুত্ব ছিলো বেশি। প্রথমেই আসে একজন সাধারণ মরটিসিয়ান জন মিলার এর চরিত্রে ক্রিস্চিয়ান বেএল, তার অনবদ্য অভিনয় যেকোনো দর্শকের জন্য আলাদা প্রাপ্তি। আমার মনে হয়েছে তার জীবনের সেরা অভিনয়গুলোর একটি। এর পরে মেজর লি এর চরিত্রে তং দাঅই, দেহপসারিনী যু মো এর চরিত্রে নি নি, ছাত্রী সুজুয়ান এর চরিত্রে জহাং এবং চার্চের সেবক অনাথ জর্জ এর চরিত্রে হুয়াঙ। এরা প্রত্যেকেই তাদের অভিনয়ের জন্য প্রশংসার দাবীদার।

FlowersOfWarPoster

ক্যাথিড্রালের ফাদার এর মৃত্যুতে যুদ্ধকালীন সময়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে নানকিং এ আসে জন মিলার, এখানে দেখা হয় জাপানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে চলা কনভেন্টের দুজন ছাত্রীর সাথে যাদের মধ্যে একজন সুজুয়ান। তারপর ঘটনা এগিয়ে চলে। যুদ্ধকালীন দৃশ্যগুলো দারুন দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধ্বংসস্তুপ এর আড়ালে চলা গেরিলা যুদ্ধ এবং প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলো যথেষ্ট নিঁখুত এবং বিস্তৃত। পোশাক এবং সেট দুটোই উচ্চ-প্রশংসার যোগ্য। একটি ক্যাথিড্রাল এবং কনভেন্ট বিদ্যালয়কে ঘিরেই মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে।

জাপানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে এই কনভেন্টে আশ্রয় নেয় বেশ কিছু ছাত্রী একই সাথে ঘটনাচক্রে সেখানে আশ্রয় নেয় নানকিং প্রদেশের বেশ কয়েকজন দেহপসারিনী। এই কনভেন্টটিতেই আসে জন মিলার। এখানে মূলঘটনাটিকে একটি অদ্ভুত কিন্তু শক্তিশালী দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে সমাজের তথাকথিত অস্পৃশ্য কয়েকজন নারী তাদের বিপরীতে সদ্য কিশোরী কনভেন্ট ছাত্রী, আবার দৃঢ় মনের সেবক জর্জ তার বিপরীতে অর্থলোভী জন মিলার। এই বিপরীত চরিত্রগুলোকে একসাথে একটি জায়গায় আবদ্ধ রেখে যুদ্ধের চরম পরিস্থিতিতে তাদের মানবিক অনুভূতিগুলোকে উত্থান-পতনের মাধ্যমে এক জাদুকরী ছন্দে পরিচালনা করা হয়েছে। শক্তিশালী প্লট, সাধারণ কিন্তু গভীর সংলাপ এবং যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, উপাদানগুলো এক হয়ে পুরো সময়টি দর্শককে বিমোহিত করে রাখবে এটা নিঃশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

চলচ্চিত্রটির ঘন্টাখানেকের সময় জন মিলার যখন সেনাদের ধর্ষণের হাত থেকে ছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য নিজের কাপুরুষোচিত মনোভাবকে ছুড়ে ফেলে চার্চের ফাদারের পোশাকে, নিজের জীবন বাজি রেখে বাইরে এসে কঠিন স্বরে তার মূলচরিত্রে প্রবেশ করে তখন স্বতস্ফুর্ত হাততালি আটকে রাখা সম্ভব নয়। একই ভাবে যখন দেহপসারিনী হিসেবে সমাজে অবহেলিত-ঘৃণিত কয়েকজন নারী তাদের ক্ষুদ্র বৈচিত্রহীন জীবনের বাইরে এসে নিজের জীবন উত্সর্গ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পিছুপা হয়না, তখন সাধারণ মানবিক গুনাবলীর বাইরে তাদের দেবত্বের আসনে বসানো কম হয় বৈকি। এভাবেই চলচ্চিত্রটি মানুষের জীবনের অজস্র ক্ষুদ্র অনুভূতি ও পরিস্থিতিগুলো বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেছে অসংখ্য জটিল সমীকরন যার হিসেব মেলানো সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, অতিপ্রাকৃত ঈশ্বর আর মানুষের মাঝে প্রাচীন দন্দ্বের অনবদ্য প্রকাশও এই চলচ্চিত্রটি।

"দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার"- আমার দেখা চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে অন্যতম সেরা, এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। জীবন-মৃত্যু, সৌন্দর্য্য-ধ্বংস, যুদ্ধ-ভালোবাসা এরকম অসংখ্য বিপরীত পরিস্থিতির সংঘর্ষে, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কেউ জয়ী হলো কিনা তা হয়তো প্রকাশ পেলোনা। কিন্তু এই যে দর্শককে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি চুর্ণবিচুর্ণ করে আবার প্রতিটি মুহুর্তে নতুন করে গড়তে বাধ্য করা হলো, এর জন্য সাধারণ প্রশংসা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত অন্যসব চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে আমি "দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার"-কে প্রথম সারিতে রাখবো অবশ্যই।

the-flowers-of-war02

[চলচ্চিত্রের পোস্টারগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]

Saturday, May 19, 2012

লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি : মোনালিসা এবং অন্যান্য

"লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি"- মানব সভ্যতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একটি নাম। যুগের পর যুগ ধরে অজস্র মানুষের মনে কৌতূহল ও বিস্ময় জাগানো এই মানুষটি আসলেই তুলনাহীন। তিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থপতি, সংগীতজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক এবং আরও অনেক অনেক দক্ষতার অধিকারী একজন বিস্ময়কর মানুষ, ইটালিয়ান রেনেসার অন্যতম পথিকৃত। তার অজস্র অমর চিত্রকর্মের মাঝে "মোনালিসা" পৃথিবী শ্রেষ্ঠ, ধারণা করা হয়, যেকোনো শতাব্দীর যেকোনো চিত্রকর্মের মাঝে "মোনালিসা" হচ্ছে সব থেকে বেশি আলোচ্য ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ছিলেন তার যুগের থেকেও আধুনিক, তার উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি এখনও মানুষের কাছে রহস্যময়। লিওনার্দোর ব্যাক্তিগত নোটবুকগুলো পৃথিবীর ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপাদনগুলোর মাঝে অন্যতম, যার ভেতরে রয়েছে এই মেধাবী মানুষটির অজস্র কাজের প্রমান ও উদাহরণ। "লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি"- মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অতিমানবীয় চরিত্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে, যার মেধার সমতুল্য পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু আসলেই কি লিওনার্দোর সবগুলো কাজ তার একক চিন্তাশক্তির ফসল নাকি তিনি অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে আরও ব্যাপক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে এনেছেন শক্তিশালী করে? দেখা যাক একটু গভীরে গিয়ে। লিওনার্দো এর যে উদ্ভাবনগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সব থেকে বেশি তার পেছনের ইতিহাস নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করা যাক।

220px-Leonardo_da_Vinci_-_Self-Portrait_-_WGA12798

[নিজের তৈরী প্রতিকৃতি, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি]


লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির ব্যাক্তিগত নোটবুকগুলো গবেষনার জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯ শতকের শেষের দিকে। জার্মান বিশেষজ্ঞ [url=http://www.dictionaryofarthistorians.org/richterj.htm]Jean Paul Richter[/url] সর্বপ্রথম এই নোটবুকগুলো থেকে লিওনার্দোর কাজ অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। এর আগে সমগ্র পৃথিবীর কাছে লিওনার্দোর নোটবুকগুলো ছিলো অজানা ও চোখের আড়ালে। Richter একক প্রচেষ্টায় এই বিস্ময়কর কাজগুলো পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন। এর পর থেকেই শুরু হয় এই উপাদনগুলো নিয়ে গবেষণা।


"ইটালিয়ান রেনেসা", ১৩ শতকের শেষ থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত এই সময়টি ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই সময়ে ইউরোপের বিশেষ করে ইটালির জ্ঞান-বিজ্ঞান এর প্রত্যেকটি শাখা চরম উন্নতি সাধন করে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে ধাবিত এই সময়টিতে, অসংখ্য মেধাবী মানুষের অসাধারণ কাজগুলো ইউরোপের এমনকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর মাঝে অন্যতম। বিজ্ঞান এবং শিল্প উভয়ই উন্নতির শিখরে অবস্থান করছিলো। "সিয়েনা" ছিলো এই বৈপ্লবিক উন্নতির কেন্দ্রবিন্দু। এই মেধাবী মানুষগুলোর মাঝে লিওনার্দো ছিলেন একজন।

১৫ শতকের শেষের দিকে বিখ্যাত ব্যাক্তি [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Ludovico_Sforza]Ludovico Sforza[/url] তাদের পারিবারিক শহর মিলান এর [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Sforza_Castle]দুর্গ [/url]দখল করেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানচর্চার অন্যতম সেরা পৃষ্টপোষক। তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত অনেক বৈজ্ঞানিক-চিত্রশিল্পী-দার্শনিক-স্থপতিকে নিজের দুর্গে আমন্ত্রণ জানান। তারই আমন্ত্রণে সারা দিয়ে লিওনার্দো ১৪৮২ সালে দুর্গে আসেন। তিনি প্রায় ১৭ বছর একটানা এখানে ছিলেন। এই সময়টাতে বিজ্ঞান এবং গণিতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন লিওনার্দো। ১৪৯৬ সালে এই দুর্গে আসেন বিখ্যাত গণিতজ্ঞ [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Luca_Pacioli]Luca Pacioli[/url]। তিনি [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Rhombicuboctahedron]Rhombicuboctahedron[/url] এর উপরে কাজের জন্য স্মরণীয়। তিনি এবং লিওনার্দো মিলে এই সময়টিতে গণিতের বিভিন্ন জটিল বিষয়ে গবেষণা করেন, Luca Pacioli একাধারে লিওনার্দো এর গণিত শিক্ষক এর ভূমিকা পালন করেন। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি সর্বপ্রথম Luca Pacioli এর "আর্কিমিডিয়ান সলিড" সংক্রান্ত কাজ "De divina proportione" বইয়ে প্রকাশ করেন। এই বইতেই [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Golden_ratio]"গোল্ডেন রেশিও"[/url] নিয়ে আলোচনা করা হয়। যখন ১৪৯৯ সালে ফ্রান্স ইটালি আক্রমন করে তখন দুজনেই দুর্গ ত্যাগ করেন, পরবর্তী সময়েও এই দুজনের মাঝে যোগাযোগ বজায় থাকে। লিওনার্দো, Luca Pacioli এর কাজের উপর যথেষ্ট দক্ষতা লাভ করেন তার ছাত্র হিসেবে।

250px-Ludovico-Sforza-1495

[Ludovico Sforza]

adss

[Sforza_Castle]

220px-Leonardo_polyhedra

[Rhombicuboctahedron]

220px-Divina_proportione

[মানুষের মুখায়বে "গোল্ডেন রেশিও"]


ইটালিয়ান রেনেসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ছিলেন প্রকৌশলী [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Taccola]Mariano di Jacopo detto il Taccola[/url]। তিনি তার উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির মাধ্যমে যন্ত্রকৌশলকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অন্যরকম উচ্চতায়। কিন্তু পরবর্তিতে এই মানুষটির কাজ নিয়ে খুব একটা গবেষণা হয়নি। এমনকি ইটালির ইতিহাসে আলোচ্য ব্যক্তিবর্গের মাঝে খুব কমই শোনা যায় Taccola এর নাম। কিন্তু বিভিন্ন যান্ত্রিক অবকাঠামোর উপর গবেষনায় তিনি সব থেকে এগিয়ে ছিলেন। পরবর্তিতে Taccola এর কাজের সাথে লিওনার্দোর কাজগুলোর যোগসূত্র পাওয়া যায়। Taccola এর অক্ষত ৫টি নোটবুক এর মাঝে তার অসংখ্য কাজ লিপিবদ্ধ ছিলো।

220px-Taccola_first_piston

[পিস্টন এর কার্যপদ্ধতি,Taccola]

220px-Taccola_overbalanced_wheel

[যুদ্ধে ব্যবহারের যন্ত্র,Taccola]

220px-Taccola_machines

[বিভিন্ন মেশিন ড্রয়িং,Taccola]

220px-Taccola_ship

[প্যাডেল বোট,Taccola]

বংশানুক্রমে আরেকজন বিখ্যাত ব্যাক্তি [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Francesco_di_Giorgio]Francesco di Giorgio[/url] এই নোটবুকগুলো পান। তিনি Taccola এর বিভিন্ন কাজ এর উপর আরও বিস্তারিত গবেষণা করেন এবং উন্নত মডেল তৈরী করেন। যার মধ্যে পানির নিচে চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য উদ্ভাবিত পদ্ধতি অন্যতম। এই Francesco di Giorgio এর নোটবুক ছিলো লিওনার্দোর সংগ্রহে। এমনকি লিওনার্দোর ম্যানুস্ক্রিপটে Francesco di Giorgio এর কাজের নোট পাওয়া যায়। লিওনার্দো, Taccola এবং Giorgio এর পানির নিচে চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য উদ্ভাবিত পদ্ধতি নিয়ে আরও বিস্তারিত কাজ করেন এবং এই পদ্ধতির আরও যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেন।

170px-Carnet_Francesco_di_Giorgio_Martini

[মেশিন ড্রয়িং,Giorgio]

index

[পানির নিচে চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য, লিওনার্দো]

এমনকি [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Vitruvian_Man]Vitruvian Man[/url], এই কাজটি লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির সবথেকে পরিচিত একটি ড্রয়িং। মানবদেহ নিয়ে এই একই ধরনের কাজের প্রমান ও চিত্র পাওয়া যায় Taccola এর নোটবুকেও।

220px-Taccola_Vitruvian_man

[Vitruvian Man,Taccola]

4

[Vitruvian Man,লিওনার্দো]

লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির তৈরী করা উড়োজাহাজ এর বিভিন্ন মডেল নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক। কিন্তু ইতিহাস ঘটলে দেখা যায় যে, এই ধরনের কাজে গবেষণা শুরু হয়েছে লিওনার্দো এর জন্মের প্রায় এক শতাব্দী আগে থেকেই। Malmesbury চার্চ এর সন্ন্যাসী [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Eilmer_of_Malmesbury]Eilmer[/url] সর্বপ্রথম হাতে তৈরী গ্লাইডার ব্যবহার করে উড়তে সক্ষম হন। তিনি প্রায় ২৫ মিটার উচ্চতা থেকে শুরু করে ২০০ মিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু প্রচন্ড বাতাসে মাটিতে পড়ে আঘাত পান এবং তার দুই পা ভেঙ্গে যায়। তিনি পরবর্তিতে আরও গবেষণা করে নিজের ভুল ধরতে সক্ষম হন এবং উল্লেখ করেন তার যন্ত্রটির গঠনে কি কি ভুল ছিলো। তিনিই সর্বপ্রথম উড়তে সক্ষম এরকম যন্ত্র নিয়ে যথেষ্ঠ গবেষণা করেন। প্রথিতযশা ইংরেজ ইতিহাসবিদ [url=http://en.wikipedia.org/wiki/William_of_Malmesbury]William of Malmesbury [/url] তার গ্রন্থে Eilmer এর এই প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে যান। পরবর্তিতে লিওনার্দো যে ধরনের গ্লাইডার মডেল নিয়ে কাজ করেছেন তা একদিক থেকে দেখলে Eilmer এর কাজের আরও উন্নত সংস্করণ। পরবর্তিতে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এর উড়োজাহাজের বিভিন্ন মডেল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, তার সবগুলোই প্রায় প্রায়োগিক দিক থেকে ব্যার্থ। চিন্তাশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে লিওনার্দো তার উড়োজাহাজের মডেলগুলো নির্মাণ করলেও সেগুলোর বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ সফল হয়নি।

t

rr

[উড়োজাহাজ নিয়ে কাজ, লিওনার্দো]

images

g

d

2

[মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ নিয়ে ড্রয়িং এর কিছু অংশ, লিওনার্দো]

jghjg

gjgj

<f

[আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ড্রয়িং এর কিছু অংশ, লিওনার্দো]


লিওনার্দো তার কৈশোরে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Verrocchio]Andrea del Verrocchio[/url] এর কাছে শিক্ষা লাভ করেন। সে সময় থেকেই চিত্রশিল্পী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি। পরবর্তিতে তার অজস্র অমর চিত্রকর্ম এরই প্রমান বহন করে। তবে তার অসংখ্য কাজের মধ্যে আলোচনায় শীর্ষ স্থান দখল করে রাখে "মোনালিসা"। এই চিত্রকর্মটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিংবা কৌতূহল-রহস্যের শেষ নেই। যেই পদ্ধতিতে লিওনার্দো এই অমর চিত্রকর্মটি তৈরী করেন সেটি ইটালিয়ান রেনেসার চারটি প্রধান পদ্ধতির একটি [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Sfumato]Sfumato[/url]। এই পদ্ধতিতে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির সমতুল্য কাজ নেই বললেই চলে, অসাধারণ দক্ষতায় Sfumato পদ্ধতিতে তৈরী করা চিত্রকর্মগুলোর আসল গঠন পদ্ধতি এখনও সঠিক ভাবে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

250px-Mona_Lisa,_by_Leonardo_da_Vinci,_from_C2RMF_retouched

["মোনালিসা", লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি]

Pascal Cotte নামের একজন প্রকৌশলী তার উদ্ভাবিত শক্তিশালী একটি ক্যামেরা দিয়ে সর্বপ্রথম "মোনালিসা" চিত্রকর্মটি বিশ্লেষণ করেন। সাধারণ পেশাদারী ক্যামেরা অন্তত ২০ মেগাপিক্সেল ক্ষমতার হয়ে থাকে যা কিনা মৌলিক তিনটি রং নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। কিন্তু Pascal Cotte এর এই বিশেষ ক্যামেরা ২৪০ মেগাপিক্সেল ক্ষমতার যা কিনা ১৩টি তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে কাজ করতে সক্ষম, যার মাঝে ৪টি আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে। এই ক্যামেরার ফিল্টারটি এমনভাবে তৈরী যা কিনা একটি ছবিকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। বিভিন্ন আঙ্গিকে শক্তিশালী পদ্ধতিতে বিশ্লেষণের পরে বিপুল পরিমান তথ্য জমা হয় কম্পিউটারে। Pascal Cotte এর তৈরী সফটওয়ার এই তথ্য বিশ্লেষণ করে ছবিটির প্রতিটি ধাপ পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে "মোনালিসা" ভার্চুয়ালি পুনরায় সৃষ্টি করা হয়। যা লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির অসাধারণ দক্ষতার একটি দিক উন্মোচন করে দেয়।


"মোনালিসা" তৈরির সময় সাদা ক্যানভাসের উপরে বিভিন্ন স্তর তৈরির জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করেন লিওনার্দো। আর এতে তিনি এতটাই দক্ষ আর সফল ছিলেন যে পরবর্তিতে আর কেউই এই পদ্ধতিতে সমানভাবে সফল হয়নি। বিভিন্ন অনুপাতের মিশ্রনের তৈলাক্ত স্তর ব্যবহার করে কাজটি করেন লিওনার্দো। এতে বিভিন্ন স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে রং মিশিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন "মোনালিসা" এর। এই বিভিন্ন স্তর আলোর বিপরীতে প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মাধ্যমে স্টেইনড কাঁচের মত কাজ করে থাকে। একারণেই আলো-ছাঁয়ার একটি রহস্যময়, জাদুকরী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যা কোনো ভাবেই বিশ্লেষণের ক্ষমতার বাইরে। শুধু মোনালিসাই নয় আরও বেশ কয়েকটি চিত্রকর্মে লিওনার্দো এই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে গেছেন। শিল্পজগতে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির এই কাজগুলো আজও সমান ভাবে রহস্যময় এবং শ্রেষ্ঠ।


সময়ের সাথে সাথে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এর অসংখ্য কাজ নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক। একজন অতিমানবীয় মেধার অধিকারী হিসেবে তাকে সবসময়েই শ্রদ্ধা করা হয়ে থাকে। একই সাথে এতো দক্ষতার অধিকারী একজন মানুষ আসলেই বিরল। তার উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি তাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে তার সময়ের থেকেও বহু বহু বছর আগে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবথেকে শক্তিশালী চরিত্রগুলোর মাঝে তিনি অবশ্যই অবিস্মরণীয়। চিত্রশিল্পী হিসেবে তার মেধা ও দক্ষতার কোনো তুলনা হয়না। তার নোটবুকগুলোর অনেক কাজ অতীতের মেধাবী অসংখ্য মানুষের কাজের সাথে বর্তমানের সমন্বয় সাধন করতে সফল বৈকি। তার সবগুলো উদ্ভাবন হয়তো একক মৌলিক চিন্তা ছিলোনা, কিন্তু তিনি সেই ধারণা ও চিন্তাগুলোকে তার তুখোড় বিশ্লেষনী ক্ষমতার ব্যবহারে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। একজন অসাধারণ মেধা-মননের মানুষ হিসেবে তিনি মানব সভ্যতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন একথা অনায়াসে বলা যায়।


[তথ্যসূত্র- ন্যাশনাল জিওগ্রাফী, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি অর্গানাইজেশন, উইকিপিডিয়া
ছবি- বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহীত

আরও কিছু খোঁজাখুজি-
http://www.milanocastello.it/ing/lungaRestaurato.html
http://www.leonardoda-vinci.org
http://mobile.darkroastedblend.com/26QM/news/2012/05/strangest-tanks-in-history-part-1.html ]





Sunday, May 13, 2012

রুদ্ধশ্বাস কয়েক ঘন্টা- একজন মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা

আজকে গ্র্যাজুয়েশন এর শেষ পরীক্ষা ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই আজকের দিনটা অন্যরকম। আমার নরক থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দবার্তা। বিকেলে একটা পার্টিতে যাওয়া হলো, রাতে ফিরলাম হোস্টেলে প্রায় ১২টা বাজে তখন। সবকিছু ঠিক ছিলো, রাত ১টার দিকে জল ভরতে এক তলায় গিয়েছি, হঠাৎ দেখি দৌড়ে আসছে এক ব্যাচমেট। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বললো, একজন জুনিয়র আত্মহত্যা করার জন্য ছাদে দাড়িয়ে আছে। শোনার সাথে সাথে আমার প্রথম বছরের প্রথম দিনের স্মৃতি চোখের সামনে যেনো ঝলসে উঠলো। আমি যেই রাতে প্রথম বর্ষের ছাত্রাবাসে উঠি, তার পরের দিন সকালে ছিলো আমাদের প্রথম ক্লাস। প্রচন্ড রেগিং (যাদের ভারতের উত্তর প্রদেশের রেগিং সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের বোঝার উপায় নেই) এর মাঝ দিয়ে অপরাধীদের মতো দল বেঁধে যখন ক্লাসে যাচ্ছিলাম তখনো জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে, সেই দুঃসহ কয়েকটা ঘন্টা পার হবার পরে যখন হোস্টেলে ফিরলাম, শুনি, আমাদের এক ব্যাচমেট নিজের রুমে আত্মহত্যা করেছে। সাথে সাথে দৌড়ে যাওয়ার আগেই সব শেষ। এখনও মনে আছে, ব্যাস, কয়েক ঘন্টার মাঝে মিডিয়া, পুলিশ, কলেজের প্রশাসন, আতংকিত অভিভাবক সব মিলিয়ে ভয়ংকর একটা অভিজ্ঞতা। নিজের দেশের বাইরে এসে কলেজের প্রথম দিন এধরনের ঘটনায় হতবাক আমি।পরবর্তী কয়েক ঘন্টার মাঝেই সেদিন ৭০০ ছাত্রের হোস্টেল ফাঁকা হয়ে গেলো, রইলো হাতেগোনা আমার মতো ২০-৩০ জন। এই স্মৃতি এখনও খুব একটা পুরনো হয়নি।

তাই আজকে এই কথা শুনেই দৌড়ে ছাদে গেলাম, তখনো সবাই ব্যাপারটা জানেনা। আর এভাবেই পরীক্ষা শেষ, সবার বাড়ি ফেরার তোড়জোড়, অনেকে ইতিমধ্যেই চলে গেছে। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আতংকিত হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে, খুবই সংকীর্ণ ছাদের কার্নিশে এক ছেলে মাতাল অবস্থায় বসে আছে। ফোনে কথা বলছে নিজের মা-এর সাথে। জায়গা পরিবর্তন এতই অসংলগ্ন ভাবে করছে যেকোনো মুহুর্তে নিচে পড়তে পারে। আমাদের ছাদ ৫ তলায়, এরই মাঝে নিচে ছাত্ররা যে যা পেড়েছে নিয়ে এসেছে। বিছানার তোষক হতে শুরু করে লেপ-কম্বল সব স্তুপাকৃতি করে রাখা হয়েছে, নিচের কার্নিশগুলোতেও বিছিয়ে দেয়া হয়েছে এসব। কোনভাবেই তাকে মানাতে না পেড়ে, শেষপর্যন্ত বেশ কয়েকজন কার্নিশে নেমে গেলো তাকে ধরার জন্য। সমস্যা হচ্ছে কার্নিশ এতই সংকীর্ণ যে, যারা নিচে নেমেছে তাদের জন্য এখন আলাদা ভয়।

এরই মাঝে, চিফ ওয়ার্ডেন, প্রক্টর, ডিরেক্টর, পুলিশ সব এসে হাজির। কিন্তু কেউ সাহস পাচ্ছেনা কিছু বলার, অনেকবার চেষ্টা করা হলো তাকে মানানোর। এরই মাঝে প্রক্টর বললেন মোটা রশির ব্যবস্থা করতে, আমার কাছে একটা বেশ মোটা বড় রশি ছিলো রুমে, দৌড়ে গিয়ে নিয়ে আসলাম। কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে সেই ছেলেকে না জানিয়ে কিভাবে তাকে রশি বাঁধা হবে? যারা মানব শিকল তৈরী করতে নিচে নেমেছিলো উপর থেকে তাদেরকে ধরে রাখা হচ্ছে, কিন্তু জায়গা সংকুলান হচ্ছেনা।

কোনভাবে চেষ্টা করে ধীরে-সুস্থে রশির একটা অংশ সেই ছেলেটিকে জড়িয়ে দেয়া হলো, আমরা কয়েকজন মিলে ধরে রাখলাম পিছন থেকে। কিন্তু ছেলেটির যথেষ্ট ওজন হওয়ায় এই সুরক্ষা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়, আর এছাড়াও যারা নিচে দাড়িয়ে আছে কার্নিশের ধারে, তাদের অনেকেই এখন তাদের ভারসাম্য রাখতে পারছেনা ধাক্কা-ধাক্কিতে। এদিকে ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দেয়া হলো, কিন্তু আসার কোনো নাম-গন্ধ নেই। এদিকে সেই ছেলেকে তার মা-বাবার সাথে কথা বলিয়ে মানানোর চেষ্টা চলছে ফোনে। অনেকবার নিচে পড়ার উপক্রম হলো, কিন্তু ছাত্ররা নিজেদের হাত দিয়ে কোনভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে চলেছে।

ফায়ার-ব্রিগেড আসতে এতই দেরি হচ্ছিলো যে, শেষ পর্যন্ত হোস্টেল থেকে জলের পাইপ নিয়ে আসা হলো। যেটা পেঁচিয়ে পুরো একটা ব্যারিয়ার তৈরী করা হলো কার্নিশের সবার চারপাশে। এবার আসল পদক্ষেপ, যেভাবেই হোক আমরা বুঝলাম আমাদের নিজেদেরই ওকে উপরে তুলে আনতে হবে। কিন্তু একবার যদি সে মাঝখানে ভর ছেড়ে দেয় তাহলে শুধু সেই ছেলেই না সাথে আরও কয়েকজনের নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এদিকে বাতাস এর বেগ বাড়ছে, ঝড়ের সম্ভাবনা। তাই ধীরে ধীরে রশি টেনে শক্ত করা হলো, পাইপ পুরো পেঁচিয়ে শক্ত করে রাখা হলো। এরপর একসময় প্রায় ১৫-২০ জনের সাহায্যে সেই ছেলেকে উপরে কোনমতে ধরে তুলে আনা হলো অর্ধেক সংজ্ঞাহীন অবস্থায়। সেই সাথে সমাপ্ত হলো রুদ্ধশ্বাস কয়েক ঘন্টার।

এই কলেজে আসার পর থেকে অনেক ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনা আমরা দেখেছি, প্রচন্ড মানসিক চাপ, বিরূপ পরিবেশ, শিক্ষকদের অসহনীয় অত্যাচার, জঘন্য পরিস্থিতি, তাতে অনেক পরিচিত মুখ হারিয়ে গেছে অসময়ে। প্রথম বর্ষ এর রেজাল্টের পড়ে হোস্টেলে ফিরে শুনেছিলাম, আমাদেরই এক ব্যাচমেট মেয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে। একইভাবে দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে দুইজন জুনিয়র আত্মহত্যা করেছিলো নানা কারণে। অসংখ্য মানুষের এভাবে চলে যাওয়া দেখে সবসময় একটাই প্রশ্ন মাথায় এসেছে, কিছু তো একটা ভুল হচ্ছে!! কিছু তো একটা সমস্যা এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে!!

যারা থ্রি ইডিয়টস চলচ্চিত্রটি দেখে থাকবে শুধু বলতে পারি তারা আমাদের পরিস্থিতির ৫ শতাংশ হয়তো বুঝতে পারবে। বাস্তব এর থেকেও জঘন্য। যদি শিক্ষা নিতে এসে শিক্ষক ও সিলেবাসের চাপে একজন ছাত্রর আত্মঘাতী হতেই হয় তাহলে সেই ছাত্রটির যদি দোষ থাকে তাহলে একই দোষ থাকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থারও।

অসংখ্য অভিভাবক তাদের সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণ করতে দেশের বাইরে পাঠান, কিন্তু আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি, শেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আর একবার ভাবুন। ভাবুন যে, এই পদক্ষেপে সেই মানুষটির জীবন কিভাবে বদলে যাবে, সে কি তার নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য মানসিক ও শারীরিক ভাবে যথেষ্ঠ পরিপক্ক কিনা। নয়তো এই অজস্র অসময়ের মৃত্যু মিছিলে হয়তো পরবর্তী নামটা তারও হতে পারে।

আমি শুধু সেই বাবা-মা এর কথা চিন্তা করি যাদের সন্তান আজকে রাতে এই অবস্থায় ছিলো, আর চিন্তা করি দূরদেশ থেকে শুধু ফোনে কথা বলার মুহূর্তগুলোতে তাদের দুর্বিষহ অনুভূতি। একবার ভাবুন, আপনার সন্তান ফোনের অন্যপ্রান্তে আর আপনি জানেন যেকোনো মুহুর্তেই এটা তার শেষ কথা হতে চলেছে !!!!

Thursday, May 10, 2012

প্রফেসরের মৃত্যুরহস্য

ফোনটা দুবার বেজে উঠতেই বিরক্তি সহকারে কানে লাগালেন উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল আলম, ওপাশ থেকে সহকর্মী আহসান এর গলা ভেসে এলো।

"স্যার, একটা মৃত্যুসংবাদ আছে"
"হুমম, মৃত্যুসংবাদ!!... নাকি খুন ?"
"মানে এখনও ঠিক বলা যাচ্ছেনা..."
"অ... তা কে? কোথায়?"
"প্রফেসর রাশেদুল হক..."
"হ্যাঁ !! .."
"জ্বি, স্যার, এইমাত্র উনার বাসার কেয়ারটেকার ফোন করেছিলো, ভোর বেলায় ডাকতে গিয়ে মৃত অবস্থায় পায় উনাকে.."
"হুমমম; ঠিক আছে আসছি.."
"ঠিক আছে স্যার"

ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে রইলেন শহীদুল আলম, কালকে একটা কেসের কাজ থেকে অনেক রাতে ঘরে ফিরেছেন। এখন বাজে মাত্র সকাল ৬:৩০টা, "প্রফেসর রাশেদুল হক, বিশিষ্ট পুরাতত্ত্ববিদ রাশেদুল হক নিজের ঘরে মৃত !! খুন ? নাকি সাধারণ মৃত্যু?"

বাড়িটা পুরনো, দেয়ালের ফিকে হয়ে আসা রং আবছা বোঝা যায়। আশেপাশের বহুতল ভবনগুলোর কাছে একদম শ্রীহীন দেখাচ্ছে দোতলা বাড়িটাকে। তবে একটাই পার্থক্য যে, একচিলতে বাগান ঘেরা বাড়িটা সাবেকি আমলের জৌলুসের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন বাজে সকাল ৮টা, সকালের রোদে চারপাশটা অন্যরকম লাগছে।আহসানকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকার আগে শহীদুল আলম আশপাশটা একবার দেখে নিলেন। মেইন গেট থেকে রাস্তা চলে গেছে সরাসরি বাড়ির সামনের বারান্দা পর্যন্ত, সেখানে জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন লোক। তিনি সামনে যেতেই এগিয়ে এলো একজন বয়স্ক মানুষ,

"স্যার, আমিই ফোন করেছিলাম.."
"তাহলে আপনিই কেয়ারটেকার দিনেশ বাবু?"
"হ্যাঁ, স্যার.." কিছুটা জড়তা মেশানো গলায় উত্তর আসে।
"কিন্তু, আপনারা কোনো আত্মীয়-স্বজনকে ফোন না করে, পুলিশ স্টেশনে ফোন করলেন যে, কোনো অস্বাভাবিক কিছু?"
"না স্যার, সেরকম... কিছু নয়, কিন্তু প্রফেসর সাহেবের কোনো আত্মীয় তো দেশে নেই, তার একমাত্র ছেলে থাকেন দেশের বাইরে, আর এরকম ঘটনা ঘটবে আমরা কেউ তো বুঝতে পারিনি, ঠিক কি করা উচিত। সকাল সকাল ডাক দিতে গিয়েছিলাম হাঁটতে যাওয়ার জন্য, গিয়ে দেখি ঘরে নেই উনি। রে বাথরুমের দরজা খোলা দেখে উঁকি দিতেই, মেঝেতে পড়ে রয়েছেন দেখতে পাই।" এইপর্যন্ত বলে গলা ধরে আসে কেয়ারটেকারের।

কিছুটা সময় নিয়ে শহীদুল আলম এবার প্রশ্ন করেন, "তারপরে?"
"তারপরে আমি চিত্কার করে নুরুলকে ডাকি, [বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় লোকটিকে দেখিয়ে বলে দিনেশ] ও তখন সকালের নাস্তা বানাবার জন্য নিচের রান্নাঘরে, তারপরে দুজনে মিলে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে আসি, কিন্তু ততক্ষণে...." এই পর্যন্ত বলে থেমে যায় দিনেশ।
নুরুলের দিকে তাকিয়ে আহসান প্রশ্ন করে, "তুমি শুধু রান্নার কাজই করো?"
"না স্যার, বাড়ির অন্যান্য কাজও করি।"

শহীদুল আলম কথা বলতে বলতে ঘরের ভেতরে ঢোকেন এইবার, পুরনো ধাঁচের বাড়ি। সামনের বসার ঘর থেকে উপরে যাওয়ার সিড়ি উঠে গেছে, দোতলায় উঠতে উঠতে প্রশ্ন করেন দিনেশকে, "উনার কোনো শারীরিক সমস্যা ছিলো, মানে হার্টের অসুখ বা এরকম কিছু?"
"জ্বি, স্যার, হার্টের সমস্যা ছিলো, এছাড়াও বয়স হয়েছিলো, কিন্তু নিয়ম করে ওষুধ খেতেন, আর হাঁটা চলাও করতেন।"
দোতলার ঘরে ঢুকে বিছানার নিথর দেহটার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি, আহসানকে ভালো করে দেখতে বলে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। সাধারণ জিনিসপত্র রাখা ভেতরে, একপাশে বেসিন অন্যপাশে পানি রাখার জায়গা। বেসিনের পাশেই জানালা, সেদিকে এগিয়ে যেতেই চোখ পড়লো নিচের দিকে,আগাছায় ঢাকা বাগানের পেছন দিকটা দেখা যাচ্ছে, দেয়ালের শেষদিকে একটা ছোট গেট, তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে খোলা হয়না অনেকদিন। চারপাশে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লোনা, ফেরার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলেন বেসিনের কোনায় লেগে থাকা রক্তের দাগ। ভালো করে লক্ষ করে বাইরে এসে দাঁড়াতেই আহসান বললো, "স্যার, দেহে অস্বাভাবিক কোনো কিছু তো দেখছিনা, শুধু কপালের এইদিকে রক্ত জমে আছে, মনে হচ্ছে পড়ার সময় লেগেছে, এছাড়া যা মনে হচ্ছে, হার্ট এটাকে মৃত্যু।" তাকে বেসিনের কোনায় লেগে থাকা রক্তের দাগের কথা বলে, দিনেশ আর নুরুলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, "বাগানের ঐদিকে একটা গেট দেখলাম, খোলা হয় কি?"
নুরুল উত্তর দিলো, "না স্যার, আগে ময়লা পরিষ্কারের জন্য কাজে লাগতো, এখন ওভাবে বাগান তো নেই, যা দেখার আমিই দেখি, ঐ গেট অনেক বছর ধরেই আর খোলা হয়না।"
"হুমম, ঠিক আছে, আমি আহসানকে রেখে যাচ্ছি, তোমাদের জবানবন্দী লিখুক, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি, পোস্টমর্টেম রিপোর্টের আগে কিছু বলা যাচ্ছেনা। তোমরা উনার ছেলেকে খবরটা জানিয়ে দাও, আপাতত বিস্তারিত বলার দরকার নেই, আমি থানার দিকে এগোচ্ছি।"

বারান্দা থেকে নিচে নামতেই মুখোমুখি হলেন এক কিশোরের, প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকানোর সাথে সাথেই ছেলেটি বলে উঠলো, "আমি দীপ্র, রাশেদ আঙ্কেল ঠিক আছেন তো? সকাল সকাল বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে মনে হলো কিছু হয়েছে.. "
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উত্তর দিলেন শহীদুল আলম, "উনি আজকে সকালে মারা গেছেন..বাড়ির কেয়ারটেকার পুলিশ স্টেশনে ফোন করে জানায়।"
"কিভাবে..!?" চমকে উঠে আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো দীপ্র।
"আপাতত মনে হচ্ছে হার্ট এটাক..কিন্তু, তুমি রাশেদুল হকের কে হও?"
"আমি পাশেই থাকি, সন্ধ্যার দিকে দাবা খেলতে আসি মাঝে মাঝে... কালকেও এসেছিলাম, কিন্তু, তখন তো কিছু মনে হয়নি.."
"হুমম, শোনো, ভেতরে আমার সহকর্মী আছেন, তার কাছে যাও, কালকে কি কি ঘটেছে একবার বলো, যদি প্রাসঙ্গিক কিছু জানা যায় আর কি.."
এই বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলেন তিনি।

পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এলো মৃত্যুর কারণ, "কার্ডিয়াক এরেস্ট", দেহে অস্বাভাবিক কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, রক্তে পাওয়া যায়নি কোনো বিষাক্ত কিছু। আর বেসিনের কোনায় লেগে থাকা রক্তের গ্রুপের সাথে প্রফেসর রাশেদুল হকের রক্তের গ্রুপ মিলে গেলো। বোঝা যাচ্ছে পড়ে যাওয়ার সময় কপালে আঘাত লেগে থাকবে। শহীদুল আলম কথা বলতে গিয়েছিলেন রাশেদুল হকের ছেলের সাথে। পুরো ব্যাপারটা আর রিপোর্টের কথা জানিয়ে বললেন যে অস্বাভাবিক কিছু যেহেতু তদন্তে এলোনা, তাহলে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই হার্টের সমস্যা থেকে হঠাৎ মারা যান প্রফেসর। শোকার্ত মানুষগুলোকে রেখে বাইরে বেড়িয়ে আসতেই চোখে পড়লো সেই ছেলেটিকে, ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সামান্য মাথা নেড়ে বেড়িয়ে এলেন তিনি।


ঘটনার দিন সাতেক পরে, একদিন সকালে, একটা ফাইলে চোখ বুলাচ্ছিলেন শহীদুল আলম, হঠাৎ সামনের চেয়ারটা নাড়ার শব্দে তাকালেন। দেখলেন সামনে দাঁড়ানো দীপ্র। প্রশ্ন করার জন্য মুখ খোলার আগেই বলতে শুরু করলো দীপ্র,
"রাশেদ আঙ্কেলের মৃত্যুটা আমার কাছে কখনই স্বাভাবিক মনে হয়নি, আর সন্দেহ আরও বাড়ে যখন ঐদিন সকালে উনার বাড়িতে যাই আমি।"
কিছুটা অবাক হয়ে কথাটা হজম করে বলতে শুরু করলেন তিনি,
"কিন্তু দেখো, তদন্তে বা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কোনো কিছুতো ধরা পড়েনি, তাহলে কি করে বলা যায় এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়?"
একটা স্বচ্ছ ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেট এগিয়ে দিলো দীপ্র তার দিকে, ভেতরের জিনিসটি ভালো করে দেখার আগেই বললো, "এটাই সেই মার্ডার উইপন.."
হাতের জিনিসটি দেখে হাসবেন না গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করবেন ঠিক বুঝতে পারছিলেন না তিনি, ছোট্ট এক টুকরো তামার তার, একটা আংটার থেকে সাইজে বড় হবেনা, এটা কি করে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে হত্যা করার জন্য ব্যবহার হতে পারে? তিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, "ঠিক বুঝলামনা, কিভাবে সম্ভব?" মনে মনে ভাবছেন অল্পবয়স্ক কিশোর হয়তো গোয়েন্দাগিরির শখ জেগেছে।
"তাহলে চলুন ঘটনাস্থলে, সেখানে গিয়েই বাকিটুকু খোলসা করা যাক", বলেই উঠে দাঁড়ালো দীপ্র।


রাশেদুল হকের বাসার দিকে চলতে চলতে শহীদুল আলম ভাবছিলেন, কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম!! এই অল্পবয়স্ক ছেলেটার কথায় এভাবে সাড়া দেবার কোনো মানে হলো কি? বাড়িতে পৌঁছে বসার ঘরে ঢুকতেই তাদের দেখে এগিয়ে এলো রাশেদুল হকের ছেলে এবং বাড়ির কেয়াটেকার। দীপ্র তাদেরকে বসতে বলে নুরুলকেও ডাক দিতে বললো, আহসান দাঁড়িয়ে রইলো দরজার সামনে, উল্টোদিকে শহীদুল আলম বসতেই শুরু করলো দীপ্র।

"যেদিন সকালে রাশেদুল হক মারা যান, সেদিন সকালেই আমি এখানে এসেছিলাম। সবার সাথে কথাও হয়, পুলিশ বেরিয়ে যাবার পরে, আমি দোতলার ঘরে যাই। সেখানে কোনো অস্বাভাবিক জিনিস চোখে পড়েনি, কিন্তু বাথরুমে ঢুকে সবকিছু দেখে ফেরত আসার আগে চোখ যায় জানালার শিকে, পুরনো আমলের জানালার নকশা, লোহার শিক লাগানো। আর তারই কোনার একটি শিকে দেখি আংটার মতো পেঁচানো একটি সরু তামার তার, জিনিসটি বলতে গেলে অপ্রাসঙ্গিক। স্বাভাবিকভাবেই চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মতো। আমারও এড়িয়ে যেতো যদিনা একটি সম্ভাবনা মাথায় না আসতো। বাথরুমের জানালা দিয়েই বাগানের পেছনের দিকের একটা দরজা দেখা যায়, আমার সন্দেহ হয় সেখানেই।" এটুকু বলে নড়ে চড়ে বসে দীপ্র। বাকিরা চুপ।

"বাগানের ঐদিকটা ব্যবহার হয়না আমি জানি, কিন্তু সেদিন যখন আমি দরজাটা ভালো করে দেখতে যাই, তখন খেয়াল করে দেখি, দরজার জং-ধরা হাতলে সদ্য হওয়া একটি দাগ!, জং-এ ধরা হাতলটি বেশিদিন হয়নি কেউ দরজাটি খুলতে ব্যবহার করেছে, আর তাই একটি সরু দাগ পড়ে গেছে হাতলটির গায়ে, যা ভালো করে খেয়াল না করলে বোঝা যায়না। তার মানে এই দরজা দিয়ে কেউ ভেতরে এসেছে, অথবা কেউ বাইরে গেছে। কিন্তু বাড়ির লোকের জবানবন্দী অনুযায়ী ঐ দরজা অনেক বছর ধরে খোলা হয়না, তার মানে হতে পারে দুটি, কেউ মিথ্যা বলছে, অথবা বাইরের কেউ দরজা খুলেছে যা বাড়ির কেউ জানেনা।"

এই পর্যন্ত শুনে মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো শহীদুল আলমের, কিছুটা ঝুঁকে সামনে এগিয়ে বসলেন। দীপ্র বলে চললো, "দাবা খেলতে এসে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হতো রাশেদ আঙ্কেলের সাথে, তার কথা থেকেই জানি তিনি তার এই বাড়ি আর সংগৃহীত সব জিনিসপত্র একটি ট্রাস্টি করে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহারের জন্য দিয়ে যেতে চান, তার সংগ্রহের জিনিস কম ছিলোনা, বিশেষ করে তিনি যখন মিশরে খননকার্যে গিয়েছিলেন সেখানে স্মারক হিসেবে বেশ কয়েকটি জিনিস তিনি উপহার পান যার এখনকার মূল্য অনেক। আমার সন্দেহ হয় কোনো ভাবে তাকে হত্যা করে এই জিনিসগুলো হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্ত হতেই পারে।"

এবার শহীদুল আলম বলেন, "কিন্তু সেরকম কিছু তো হারানো যায়নি।" তার কথায় মাথা নাড়ে বাকিরা।
"না কথাটা পুরোপুরি সঠিক নয়, কিন্তু তাতে পরে আসছি। বাগানের দরজা খোলার চিহ্ন দেখে এবার আমি খুঁজতে খুঁজতে আসি দোতলার বাথরুমের জানালার ঠিক নিচে, দেখি সেখানে মাটিতে স্পষ্ট জুতোর দাগ। বোঝা যায় যে, প্রায় অনেকক্ষণ ধরে কেউ একজন এখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছিলো।"
"কিন্তু এই দাগ তো বাড়ির যে কারো হতে পারে"- প্রশ্ন করে আহসান।
"হ্যাঁ, হতে পারতো, যদিনা জুতোর নিচের অংশটা অদ্ভুত না হতো!"
"তার মানে?"
"যখন জুতোর দাগটা দেখি সেটার একটা অস্বাভাবিক জিনিস চোখে পড়ে আমার। সাধারনত জুতোর দাগে দুপায়ের সোলের ছাপ বোঝা যায়, অন্তত জুতোর নিচের হিলের দিকটার ছাপ দেখা যায়। কিন্তু এই জোড়া ছাপে বাম পায়ের হিলের দাগ বোঝা গেলেও ডান পায়ের হিলের জায়গা ছিলো সমান।"
"ঠিক বুঝলামনা" বলে উঠেন শহীদুল আলম।
"হ্যাঁ, এরকম ছাপ শুধু একভাবেই সম্ভব যদি ঐ পায়ের জুতোর সোল আলাদা করে উঁচু করা হয় তবে, আর এধরনের জুতো তারাই পড়ে যাদের এক পায়ের হাড় অন্য পা থেকে একটু ছোট।"
মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে সবাই দীপ্রর কথা শুনে।
"কিন্তু এই ঘটনাগুলোর সাথে খুনের কি সম্পর্ক? আর তামার তার-ই বা কি করে মার্ডার উইপন হলো?"-প্রশ্ন করলেন এবার আহসান।

"এই ঘটনাগুলো একটার সাথে আরেকটা জোড়া দিলে খুনের একটা মোটিভ আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে খুন করা হলো কি দিয়ে,সেই অস্রটাই বা গেলো কোথায়? আর পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও কোনো কিছু ধরা পড়লোনা কেনো? এথেকে একটা জিনিস সহজেই অনুমেয় যেই অস্র দিয়েই খুন করা হোক না কেনো, তার কোনো ছাপ মৃতের শরীর নেই! তাহলে এমন কি উপায় হতে পারে? এই প্রশ্ন চিন্তা করতেই আমার মাথায় আসে রাশেদ আঙ্কেলের হার্টের সমস্যার কথা। কোনভাবে যদি তার এই সমস্যাটাকেই অস্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে স্বাভাবিক ভাবেই কোনো চিহ্ন থাকবেনা যা থেকে অন্যকিছু বোঝা সম্ভব। তখন আমার মাথায় আসে সেই তামার তারের টুকরোটার কথা, জানালার শিকে তামার তারটা কেনো লেগে আছে? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় খেলে, যা হলে খাপে খাপে বসে যায় সবগুলো টুকরো ঘটনা, আর সেটা হলো বৈদ্যুতিক শক!!"

"কি!!?? কিকরে সম্ভব?? শরীরে কোনো চিহ্ন থাকবেনা? অসম্ভব"- বলে উঠলেন শহীদুল আলম।
"না অসম্ভব নয়, খুব অল্পমাত্রার বৈদুত্যিক শক (মাইক্রোশক) ব্যবহার করলে দেহে সেরকম কোনো চিহ্ন থাকবেনা। আর এক্ষেত্রে তামার তারটা সেকারণেই ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনাগুলো খাপে খাপে বসালে দাঁড়ায় এরকম-

রাতের অন্ধকারে কেউ একজন বাগানের দরজা দিয়ে ঢুকে দোতলার বাথরুমের জানালার নিচে অবস্থান নেয়, নিচ থেকে বেসিনের আয়না একাংশ দেখা যায়, রাতের বেলা ঘরে ঢুকে যখন বাথরুমে ঢোকেন রাশেদুল হক কেবিনেট থেকে ওষুধ নেয়ার জন্য, তখনি নিচে থেকে কোনভাবে, হয়তো শক্তিশালী টর্চের আলো ফেলা হয় আয়নায়, স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহলী হয়ে ঘটনাটা কি হচ্ছে ভালো করে নিচে দেখার জন্য জানালার সামনে আসেন রাশেদুল হক। তখনি তার চোখে আলো ফেলা হয়, তীব্র আলোতে হঠাৎ দৃষ্টি অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় ভারসাম্য সামলাতে জানালার শিক ধরতে যান উনি, আর তখনি আগে থেকে লাগানো তামার তার দিয়ে জানালার শিকে পাঠানো বিদ্যুৎপ্রবাহে শক পান, খুব বেশি মাত্রার না হলেও হার্টের অসুবিধের জন্য ঐ অল্প কয়েক সেকেন্ডের শক-ই তার হার্টে "ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেসন" এর জন্য যথেষ্ট ছিলো। আর তারপরে পড়ে যাওয়ার সময় বেসিনের কোনায় আঘাত লেগে তার মৃত্যু আরও তরান্বিত হয়| আর এই ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেসন রাশেদুল হকের কার্ডিয়াক এরেস্ট ঘটায়। খুব সাধারণ যন্ত্রাংশে এরকম বহনযোগ্য ব্যাটারি আর সংযোগ তৈরী করা কঠিন কিছু নয়।

তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট এর কথা লেখা থাকায় আমার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়|"

"তারপর?"-যেনো স্বপ্নের ঘোরে প্রশ্ন করলেন রাশেদুল হকের ছেলে।
"তবে এই ঘটনাতে বাড়ির ভেতরের কারো সহযোগিতা না হলে তামার তার দোতলার বাথরুমের জানালায় লাগানো কঠিন হয়ে যেতো, তাই আমার সন্দেহ গিয়ে পড়ে বাড়ির কেয়ারটেকার দিনেশবাবু এবং রাঁধুনি নুরুলের উপর। যদিও কেয়ারটেকার হওয়ার কারণে দিনেশবাবুর সম্ভাবনা বেশি ছিলো যেহেতু বাড়ির সব গেটের চাবি তার কাছেই থাকে, তাই বাগানের দরজার পুরনো তলার চাবি বের করা খুব একটা অসুবিধা হবার কথা না, আবার সকাল বেলা সবার আগে মৃতদেহ দেখতে পান তিনিই এবং মৃতদেহ জায়গা থেকে সরিয়ে আলামত নষ্ট করার ইচ্ছাও তার থাকতে পারে। কিন্তু একই ভাবে সন্দেহের বাইরে যায়না নুরুলও। তাই আমি নজর রাখা শুরু করি এই দুজনের উপরে। ফল পাই হাতেনাতে, ৫ দিন পরে এক দুপুরবেলায় রাস্তার শেষ মাথায় গলির ভেতর দিকে আড়ালে দেখি এ বাড়ির একজনকে একটি প্যাকেট অচেনা একজনের হাতে তুলে দিতে। আর যার হাতে তুলে দেয়া হলো সে ডান পা একটু খুঁড়িয়ে হাটে।"

এইকথা বলা শেষ করতেই শহীদুল আলম চোখের কোনা দিয়ে কারো নড়াচড়ার আভাস পান, মুখ ঘুরাতেই দেখেন দরজার পাশ দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে যাচ্ছে রাঁধুনি নুরুল, কিন্তু তার আগেই দরজার এইদিকে দাঁড়িয়ে থাকা আহসান চট করে এক পা এগিয়ে দেয়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো নুরুল।

"হ্যাঁ, সেদিন নুরুলকেই আমি দেখি ঐ লোকের সাথে দেখা করতে"- দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে দীপ্র।

আহসান আর শহীদুল আলম মিলে নুরুলকে জোর করে বসানোর চেষ্টা করতে থাকেন আর এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় হা করে তাকিয়ে থাকে বাকি দুজন। গাড়িতে বসা আর দুজন পুলিশকে ডেকে তাদের হাতে নুরুলকে তুলে দিয়ে এবার শহীদুল আলম প্রশ্ন করেন, "ঐ প্যাকেটে কি ছিলো?"

"মিশরের প্রাচীন দেবতা "আনুবিসের" ছোট একটা কালো পাথড়ের মূর্তি, আকারে ছোট হলেও এখনকার বাজারে এর দাম কয়েক কোটির কম হবেনা!"
"কিন্তু তুমি কি করে জানলে এই মূর্তির কথা?"
"জানতে পারি পরে, যখন আবার একবার বাড়িতে খোঁজ করতে ঢুকি, তখন সংগ্রহশালার ভেতরের দিকের একটা জায়গায় একটা গোল দাগ দেখি যার চারপাশে ধুলো জমে আছে, বুঝতে পারি ঐখানে কিছু একটা রাখা ছিলো যা কিছুদিনের ভেতরেই সরানো হয়েছে। তখনি ঘুরে ঘুরে পুরো সংগ্রহটা আবার দেখি। আমাকে এর আগেই দেখিয়েছিলেন রাশেদ আঙ্কেল, তাই একটু চিন্তা করেই দেখি আনুবিসের ছোট্ট মূর্তিটা সেই আগের জায়গায় নেই।"
"কিন্তু খুনের মোটিভ কি তাহলে এই প্রাচীন মূর্তি?"-প্রশ্ন করেন শহীদুল আলম।
"না, প্রথমে ভেবেছিলাম তাই। কিন্তু পরে দেখি তা নয়। আসলে অনেকদিন ধরেই রাশেদুল হককে এই বাড়িটা বেঁচে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে প্রমোটার আসাদ চৌধুরী। কিন্তু উনি বেঁচতে রাজি ছিলেননা, আগেই বলেছিলেন তিনি এটি জাদুঘর হিসেবে দান করে যাবেন, তাই উনাকে যেভাবেই হোক রাজি করাতে আসাদ চৌধুরী নিয়োগ করেন রায়হানকে। সে এই লাইনের পুরনো, ঘাঘু লোক। সে জানে কি করে রাজি করাতে হয় মানুষকে, কিন্তু তার টাকার লোভ, মূর্তি বিক্রির লোভ, কোনো হুমকিতেই যখন সারা দিচ্ছিলেন না রাশেদুল হোক তখন অন্য রাস্তা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেয় রায়হান। তবে এর আগেই তার চোখ যায় এই বাড়ির সংগ্রহশালার দিকে, অপরাধের লাইনের পুরনো বান্দা হওয়ায় তার বুঝতে অসুবিধা হয়না এখানে রাখা আছে বেশ কিছু দামি জিনিস। প্রাচীন মূর্তি পাচারের সাথে আগে থেকেই জড়িত ছিলো সে, তাই সে এক ঢিলে দুই পাখি মারার সিদ্বান্ত নেয়। বাড়ির ভেতরে সে অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে নুরুলকে হাত করে ফেলে, তাকে অবশ্যই সে খুনের পরিকল্পনা জানায়নি। তাহলে বেঁকে বসার সম্ভাবনা ছিলো নুরুলের। সে তাকে ঐ মূর্তি হাত করার আর এই তামার তারটা বাথরুমের জানলায় লাগানোর কাজ দেয়, অনেক টাকার লোভে মুখ বন্ধ থাকে নুরুলের। কিন্তু কখনই সে বুঝতে পারেনি কি ঘটতে যাচ্ছে। তাই খুনের পরেই ভয় পেয়ে যায় নুরুল। তাকে দেয়া টাকার অংশটা সে সুযোগ বুঝে সরানোর চেষ্টা করে, শুধু তাইনা, তার কাছে রাখা মূর্তিটাও সে রায়হানকে দিয়ে দেয়ার চাপ দেয়। আর ঐ মূর্তি নিতেই দেখা করে রায়হান, আর তখনি আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়। রায়হানের হয়তো ধীরে সুস্থে কাজ এগোনোর পরিকল্পনা ছিলো, কারণ এভাবেও রাশেদুল হকের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাড়ি বিক্রি করে বিদেশে ফিরে যাবেন এটাই পরিকল্পনার অংশ ছিলো, কিন্তু নুরুলের জন্য সেটা আর হলোনা। মূর্তি আগেই সরাতে হলো "

"কিন্তু এই ঘটনায় যদি ঐ মূর্তিটা না থাকতো তাহলে?"-প্রশ্ন করে আহসান।
"হ্যাঁ, তাহলে একটু কঠিন হতো মূল অপরাধীকে বের করা, বেশি লোভ করতে গিয়েই নিজের পরিচয় প্রকাশ করে ফেললো রায়হান।"
"কিন্তু আসাদ চৌধুরী কি এই ঘটনার পেছনে জড়িত?"
"মনে হয় না, কারণ সেরকম হলে এতো প্ল্যান করে খুন করার পরে সেই বাড়ি থেকেই জিনিস চুরি করার মতো কাঁচা কাজ করার লোক নন তিনি, যতদুর মনে হচ্ছে রায়হান নিজের বসের কাছে লুকিয়ে বড় দাও মারার মতলবে ছিলো। তবে এখনই রায়হানের বাড়ি সার্চ করলে হয়তো জিনিসপত্র সমেতই ধরা পড়বে সে, আর আসাদ চৌধুরী নিজের দিক থেকে সন্দেহের তীর সরাতে ওর পেছনে থাকবেননা এটা অনুমান করা যায় সহজেই।"

শহীদুল আলম দ্রুত উঠে পড়লেন, আহসানকে বললেন থানায় ফোন করে সার্চ ওয়ারেন্ট বের করতে। "তোমাকে ধন্যবাদ পরে দিবো আগে আসল অপরাধীকে ধরে নেই", এই বলেই বেরিয়ে পড়লেন তিনি।

পরের দিন সংবাদপত্রের পাতায় বেশ বড় করে এলো-

"চাঞ্চল্যকর হত্যা রহস্যের সমাধান: বিশিষ্ট পুরাতত্ত্ববিদ রাশেদুল হক এর খুনিকে গ্রেফতার করলো পুলিশ"