Friday, June 15, 2012

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান

কিছুদিন যাবৎ বেশ জোরেসোরে আলোচনা চলছে মায়ানমারে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে। এতে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের এবং তাদের সরকারের অবস্থানকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে যা ধারণা পেলাম তা হলো, অধিকাংশ ব্যক্তিই কোননা কোনোভাবে কিছু কিছু বাস্তব প্রেক্ষাপট এবং কারণ অগ্রাহ্য করে নিয়েই, নিজেদের অবস্থানে তর্ক করে চলেছেন। এতে করে পরিস্থিতির সামগ্রিক একটি ধারণা কারো বক্তব্যেই পাওয়া যাচ্ছেনা। বরং মনে হচ্ছে মায়ানমারে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে আক্রান্ত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকেদের আমাদের দেশে শরণার্থীর জায়গা দেয়া হবে কি হবেনা এই নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরী হয়ে গেছে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই যখন এই দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বার্থ ছাড়া গলার স্বর জোরালো করেননা, এই বিষয়টিতেও অনেকেই নিজেদের স্বার্থ খুঁজে নিয়েছেন। একইসাথে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের ধর্মের ভাই পরিচয় দিয়ে তাদের জন্য মায়া কান্নার আয়োজনে। তাই মনে হলো রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে একটি সামগ্রিক ধারণা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে।

প্রথমেই এটা পরিষ্কার হওয়া উচিত যে, মায়ানমারের অন্তর্গত ভূখন্ডে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অবস্থানজনিত সমস্যা নতুন নয়। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ভুক্ত জনগণ একদম শুরু থেকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিলো। ইতিহাস ঘাঁটলে মায়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অবস্থানজনিত ব্যাপারে কোনো স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়না। অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন একরকম দেশান্তর হয়ে বিভিন্ন সময়ে মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। এই দেশান্তরের পেছনের মূল কারণও স্বচ্ছ নয়। অনেকের ধারণা, স্বল্প ব্যায়ের জীবনযাত্রা কিংবা ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারতীয় উপমহাদেশে কাজের জন্য তত্কালীন বার্মায় স্থানান্তর। এছাড়াও একটি তথ্য প্রচলিত আছে রোহিঙ্গা ইতিহাসবিদদের মাঝে যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, এটি হলো, প্রাচীন আমলে আরব সওদাগরী জাহাজ আরাকানের নিকটবর্তী অঞ্চলে কোনো কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তিতে এই জাহাজের লোকেরা আরাকানের রাজার দয়ায় এখানেই থেকে যায় এবং এই আরব সম্প্রদায়ের লোকেরাই পরে কালক্রমে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত হয়। তবে "রোহিঙ্গা" এই শব্দটি কিভাবে এলো তা নিয়ে সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়না। তবে এই বিষয়ে মোটামুটি সকল ইতিহাসবিদই নিঃশ্চিত যে, রোহিঙ্গারা প্রথম থেকেই স্থানীয়দের বৈরী ব্যবহারের শিকার। এর পেছনের কারণ একটাই যেহেতু তারা স্থানীয় সম্প্রদায়ভুক্ত বাসিন্দা নয়। এছাড়াও ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশের সেই সময়ের বাংলা থেকে অনেক বাঙালি সেই সময় কাজের জন্য আরাকান অঞ্চলে গমন করে, পরবর্তিতে এরাও রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জনগণ ইসলাম ধর্মানুসারী।

মূলত লক্ষনীয় যে, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে প্রথম থেকেই রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেদের বৈরীতা বিদ্যমান ছিলো। রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। একারণে অনেকেই রোহিঙ্গা-রাখাইন বৈরীতাকে ধর্মীয় বৈরীতা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। কিন্তু এর পেছনের মূল কারনগুলো দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। যেহেতু আরাকান অঞ্চলের আদি বাসিন্দারা ছিলো রাখাইন তাই নতুন সম্প্রদায়ের লোকেদের আগমনে স্বাভাবিক ভাবেই যেই আর্থ-সামাজিক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয় বৈরীতা আসে সেখান থেকে, এখানে ধর্ম মূল কারণ নয়।আর যেহেতু নতুন বসতি গড়া রোহিঙ্গাদের কোনো বংশানুক্রমিক জায়গা ছিলোনা তাই এখানে জমি-জমা সংক্রান্ত একটি বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একারণে স্বাভাবিক ভাবেই রোহিঙ্গারা তাদের শুরুটা করেছিলো প্রতিকূল পরিবেশে। কিন্তু এই সমস্যা হয়তো মায়ানমারের সরকারের হস্তক্ষেপে সমাধান হতে পারতো, কিন্তু এটা জানার অপেক্ষা রাখেনা যে, মায়ানমারের সামরিক সরকার প্রথম থেকেই বিভিন্নভাবে সাধারণ জনতাকে নির্যাতন-নিপীড়ন করে এসেছে। তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম নীতি ছিলো দমন-নিপীড়ন। এর মাঝে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোকাং, পানথে এবং রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ছিলো অন্যতম। এখানে লক্ষনীয় যে, সংখ্যালঘু হিসেবে শুধু রোহিঙ্গারাই নয় অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও সামরিক জান্তার নির্বিচারে নির্যাতনের শিকার।

এখানে আরও একটি জিনিস লক্ষ্ করি, ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সংঘটিত জরিপে ১৮৯১ সালে আরাকান রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ছিলো ৫৮,২২৫ জন যা কিনা পরবর্তিতে ১৯১১ সালে এসে দাড়ায় ১,৭৮,৬৬৭ জনে। অর্থাৎ ২০ বছরে দ্বিগুনেরও বেশি। এর পেছনে কারণ ছিলো ব্রিটিশ অধ্যুষিত এলাকা থেকে তত্কালীন বার্মা রাজ্যে কম মূল্যে শ্রমিক স্থানান্তর। এক্ষেত্রে স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেদের বিরাগভাজন হওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

তাই ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করলে রাখাইন-রোহিঙ্গা সাম্প্রদায়িক বৈরীতার কারণ হিসেবে যে কারণ গুলো চোখে পড়ে তার মাঝে ধর্মের গুরুত্ব একদমই গোড়ার দিকে। মূলত এটি স্থানীয়দের সাথে অবস্থানগত বৈরীতা, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা এখানে মুখ্য নয়।

এখন রোহিঙ্গাদের এই অবস্থানগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখতে হয় এই সমস্যা অতীতে কিরকম ছিলো। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়েই শাসক কিংবা আগ্রাসী গোষ্ঠির কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার। এই ঘটনাগুলোকে মোটা দাগে ভাগ করলে কয়েকটি ঘটনা আলাদা করা যায়।

২৮শে মার্চ, ১৯৪২

মিনব্যা এবং ম্রহুং অঞ্চলের প্রায় ৫,০০০ মুসলিম রাখাইন জাতীয়তাবাদী এবং করেন্নি গোষ্ঠির আক্রমনে নিহত হয়। একই সময়ে উত্তর রাখাইন অঞ্চলের মুসলিমরা প্রায় ২০,০০০ আরাকানী ধ্বংস করে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে তত্কালীন ডেপুটি কমিশনার U Kyaw Khaing তাদের হাতে নিহত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

এইসময় জাপানি সৈন্যরা বার্মা দখল করে। কিন্তু তখন বার্মা ব্রিটিশ অধীনে ছিলো। ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী পিছু হটলে, জাপানি সৈন্যরা নির্যাতন শুরু করে স্থানীয়দের উপরে। এসময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গা-রাখাইনদের মাঝে, এমনকি তখন বার্মা জাতীয়তাবাদীগোষ্ঠী এবং ব্রিটিশ অনুগতদের মাঝেও দাঙ্গা শুরু হয়। রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ব্রিটিশদের সমর্থন করতো এবং জাপানিদের প্রতিরোধ করতে অংশগ্রহন করে,তাই স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রাসী জাপানি সৈন্যবাহিনীর ক্ষোভের শিকার হয় এবং সেসময় অকথ্য হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন এর শিকার হয়। অনুমান করা হয় এই সময় প্রায় ২২,০০০ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে তত্কালীন বাংলাতে প্রবেশ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তিতে বার্মিজ এবং জাপানিদের লাগাতর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত পার হয়ে চট্টগ্রাম প্রবেশ করে। যাদের অনেকেই বিভিন্ন সময় ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে কিন্তু অধিকাংশ সেখানেই শরণার্থী বসতি গড়ে তোলে।

বার্মার সামরিক জান্তা

বার্মার সামরিক জান্তা ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকেই নির্যাতন শুরু করে। তাদের নির্যাতনের প্রধান লক্ষ্য হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যার মাঝে রোহিঙ্গারাও ছিলো। সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ এবং স্থানীয়দের সাথে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতা কখনই রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা করতে দেয়নি। এমনকি সেই দেশের গণতন্ত্রপন্থীরাও রোহিঙ্গাদের অবস্থানগত ভাবে স্বীকার করতে চায়না, তাই রোহিঙ্গারা একরকম বহিরাগত ভাবে বসবাস করে এসেছে এই অঞ্চলগুলোতে।

১৯৭৮, বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

মায়ানমার সৈন্যবাহিনীর "নাগামিন" অপারেশনের মাধ্যমে নির্যাতিত ও নিহত হওয়ার ভয়ে প্রায় ২,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। "নাগামিন" এর মূল লক্ষ্য ছিলো এথেনিক ক্লিনসিং। তাই সরকার কর্তৃক বিতারিত হয়ে যেসকল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাদের পক্ষে মায়ানমার আবার ফেরত যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

১৯৯১-৯২, বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

মায়ানমার সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে আবার অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরবর্তিতে জাতিসংঘের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সরকারের প্রতিনিধিদলের সিদ্ধান্তে কিছু সংখ্যক শরণার্থী মায়ানমার পুনঃপ্রবেশ করলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতেই থেকে যায়।


এখন বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রায় ৫,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। ১৯৯১-৯২ সালে এদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই দেশে ফেরত গেলেও যারা এখানে থেকে গেছে তাদের মাঝে মাত্র ৩০,০০০ নথিভুক্ত। বাকি প্রায় ২,০০,০০০ নথিভুক্ত নয়। তাই জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী এই নথিভুক্ত শরণার্থীরাই কক্সবাজারের কুতুপালং এবং নয়াপাড়া এই দুটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। বাকিদের ব্যাপারে তথ্য অপ্রতুল।

এছাড়াও থাইল্যান্ড-মায়ানমার সীমান্তের থাইল্যান্ড শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১,১১,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। বিভিন্ন সময়ে আরও কিছু শরণার্থী বিক্ষিপ্ত ভাবে সমুদ্র থেকে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশের জাহাজের মাধ্যমে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়।


এখন কয়েকদিন ধরে সংঘটিত হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আবারও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি সবার সামনে চলে এসেছে। দাঙ্গার পেছনের কারণ সঠিক ভাবে জানা না গেলেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মতে একজন রাখাইন তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা ১০ জন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোক হত্যা করে। পরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ৩০০রও বেশি বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হয়। চলমান দাঙ্গায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের এসব অঞ্চল থেকে সরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এমনকি জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও ওই অঞ্চল থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। এর পরেই বিভিন্ন জলযানের মাধ্যমে সমুদ্র পারি দিয়ে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকেরা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আর দেশের অভ্যন্তরের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেয়া হবেনা বলে জানিয়ে দেয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে জনমত তৈরী হয়েছে এবং বিতর্ক চলছে। কিন্তু কোনো একটি পক্ষে সহজেই মত প্রদানের আগে "রোহিঙ্গা শরণার্থী" একটি জটিল প্রসঙ্গ এটি ভেবে দেখা উচিত। আবার কিছু সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরকমই একটি গুজবের নমুনা দেখুন "কোরানের আলো" নামের একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক পেইজে এখানে

এই পেইজ যেই ছবিটিকে দাঙ্গায় নিহত রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ হিসেবে দাবি করছে তা আসলে ১৩ জানুয়ারী, ২০০৯ সালে থাইল্যান্ড সমুদ্রসীমান্তে আটককৃত রোহিঙ্গা জেলেদের ছবি। এদের শাস্তি হিসেবে সমুদ্রতটে রোদে শুয়ে থাকতে বাধ্য করেছে থাইল্যান্ড সীমান্তবাহিনী। এই বিষয়ে খবর দেখুন এখানে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জীবন্ত মানুষের ছবিকে যারা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মৃত মানুষের ছবি বানিয়ে প্রোপাগান্ডা হিসেবে ব্যবহার করে তারা ঠিক কতোটা মানুষ? এই ছবিটি ওই পেইজে ১৩ জুন, ২০১২ পোস্ট করা হয়। মাত্র একদিনের মাঝে শেয়ারের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২,১৬৯। ধর্মের ভাই স্বীকৃতি দিয়ে এভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেয়ার এরকম নির্লজ্জ প্রচেষ্টাকে ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই।


এখন প্রশ্ন উঠছে সরকারের অনমনীয় সিদ্ধান্তের প্রতি। মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করলে এই সিদ্ধান্তটি সমর্থনের প্রশ্ন আসেনা। একারণে অনেকেই মানবিক দিক বিবেচনা করে সীমান্ত খুলে দিতে বলছেন বাংলাদেশ সরকারকে। তাদের এই মানবতাবাদী প্রচেষ্টাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একটি দেশের সরকারের পক্ষে এইধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া কতোটা যুক্তিযুক্ত কিংবা এরকম পরিস্থিতিতে কতোটা কার্যকর বা সহজ এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। মত দেয়ার আগে কিংবা ঢালাওভাবে সরকারকে দোষ দেয়ার আগে একবার সমগ্র পরিস্থিতিকে চিন্তা করে নেয়া উচিত বলে মনে করি। যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো আলাদা আলাদা করে দেখা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জায়গা দিতে কতটুকু দায়বদ্ধ? মানবিক দিক বিবেচনা করলে এবং শুধুমাত্র এই দাঙ্গার কথা বিবেচনায় আনলে সরকার শরণার্থীদের জায়গা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারে। কিন্তু এখানে ভুলে গেলে চলবেনা, একটি দেশের সরকার আগে সেই দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। মানবিক দিক বিবেচনায় আনলেও সরকারের কর্তব্য অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু বেশ কিছু ঘটনায় এখন ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৫,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে তাহলে নতুন করে যদি সীমান্ত খুলে দেয়া হয় তাহলে শরণার্থী সংখ্যা আরও বাড়বে কয়েক গুন। জনবহুল বাংলাদেশ নিজের দেশের মানুষের ভারেই নিমজ্জিত। সেখানে আগের পাঁচ লক্ষ এবং বর্তমানের অতিরিক্ত শরণার্থী স্থান দেয়া দেশের জনগনের স্বার্থ এবং সরকারের কর্মপরিধির সাথে সামঞ্জস্য কিনা তার প্রশ্ন চলে আসে। এছাড়াও এই অতিরিক্ত শরণার্থীদের নতুন জায়গার প্রয়োজন হবে, যা কিনা আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে একটি বিরাট সমস্যা। এছাড়াও এদের জন্য খাদ্য/বস্ত্র/চিকিৎসা অন্যান্য সুবিধা নিঃশ্চিত করা ঋণের ভারে জর্জরিত একটি দেশের সরকারের জন্য বাড়তি চাপ। তাই সরকারের পক্ষ থেকে শুধু মানবতার দিকটি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভবপর নয়।

অনেকের মতে বর্তমানের শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ার কথা চিন্তা করা যায়। কিন্তু সমস্যা এখানেও। মায়ানমার সরকার প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিতারণে উত্সাহী। এর আগে যেই পরিমান শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে তার খুবই কম অংশও আবার ফেরত গেছে। মায়ানমার সরকার কখনোই এই ব্যাপারে আগ্রহী ছিলোনা। সামরিক শাসনামলে মায়ানমারের সাথে আমাদের দেশের সম্পর্ক আর যাই হউক মিষ্টি-মধুর ছিলোনা এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এখন দেখা যাচ্ছে, মায়ানমার সরকার অতীতের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতেই আগ্রহী নয় তাহলে এই সরকারের থেকে বর্তমান শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা পাওয়া যাবেনা এই কথা অনায়াসে বলা যায়। এছাড়াও মায়ানমারের অবস্থানগত দিক বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, এর সাথে চারটি দেশের লাগোয়া সীমান্ত রয়েছে, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং চীন। কিন্তু শরণার্থী সমস্যা সবসময়ই সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড। তবুও থাইল্যান্ডের থেকে ৫ গুন বেশি শরণার্থী বাংলাদেশে আছে। একের পর এক সমস্যায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে যা কোনো দেশের সরকারের পক্ষে একক ভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এই শরণার্থী সমস্যা সামলানো কঠিন। তারপরও এর আগে বাংলাদেশ কখনো বৈরী মনোভাব পোষণ করেনি। কিন্তু শরণার্থী আশ্রয় প্রদান কখনোই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মায়ানমারের প্রেক্ষিতে নতুন ঘটনা নয়। আন্তর্জাতিকভাবে কখনই সেরকম কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি কিংবা চাপ প্রয়োগ করা হলেও মায়ানমার সরকার তা অগ্রাহ্য করে গেছে অতীতে। তাই এই দাঙ্গায় যদি বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ও তাহলেও যে এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হবেনা এ আশা করা সহজ নয়। তাই জাতিসংঘ এবং উন্নত শক্তিশালী দেশগুলোর উচিত যেভাবেই হোক চাপ প্রয়োগ করে এই সাম্প্রদায়িক সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করা। নাহলে অগুনিত শরণার্থী কোননা কোনো ঘটনায় বাংলাদেশে সমানত অতিক্রম করে আসতেই থাকবে। যা কোনভাবেই একটি দেশের সরকারের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তাই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক উপদেষ্টার অনুরোধে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছে সরকার। এছাড়াও যেসব অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশ্রয় গ্রহণ করেছে অতীতে সেসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে।

বর্তমান শরণার্থী বিষয়টি যেকারণে আরও জটিল হয়েছে তা হচ্ছে বাংলাদেশের মায়ানমার সংলগ্ন এবং পার্বত্য অঞ্চলগুলোর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। যেহেতু রোহিঙ্গা শরনার্থীরা অশিকাংশই নথিভুক্ত নয় তাই এদের বড় একটা অংশ সময়ের সাথে সাথে সমাজ বিরোধী নানা কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অপহরণ এবং মাদক ব্যবসায় রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেছে। কিছু প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই সব শরণার্থী শিবিরে মাদক এবং অবৈধ অস্ত্রের সহজলভ্যতার কথা। তাই পূর্বের শরণার্থীদের এহন কর্মকান্ড যেহেতু কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়, বর্তমানের শরণার্থী আশ্রয় দিয়ে এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলার দায়িত্ব কোনো সরকারের পক্ষেই নেয়া সম্ভবপর নয়। যেখানে নিজের দেশের জনগনের অবস্থান বিপন্ন সেখানে সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও কমে আসে এটা বোঝা উচিত। এছাড়াও অনেক শরণার্থীই বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠির প্রত্যক্ষ মদদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এদের হয়ে কাজ করেছে। এছাড়াও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অনেক সময়েই এদের নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছে।

অনেকেই এর সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের শরণার্থী আশ্রয়ের তুলনা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখানে তারা মূল বিষয়টি ভুলে গেছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের সহায়তা প্রদান এবং শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র একটি রাজনৈতিক ও অবস্থানগত সিদ্ধান্ত। এখানে অধিকাংশ শরণার্থী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসে এবং যুদ্ধকালীন এককালীন এই পরিস্থিতির উদ্ভবে ভারতের দীর্ঘ মেয়াদী কোনো নেতিবাচক প্রভাব ছিলোনা। কিন্তু মায়ানমার কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আক্রান্ত নয়। আর রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা এককালীন নয়। আগে অনেকবার বাংলাদেশ নিজের সীমান্ত খুলে দিয়েছে কিন্তু এই সমস্যা লাঘব হয়নি। বরং রোহিঙ্গা শরণার্থী কর্তৃক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে বিরূপ প্রভাব রয়েছে। একই সাথে এটাও দেখা উচিত যে বাংলাদেশে শুধু রোহিঙ্গা শরণার্থীই নয় ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতির পরে মিরপুরের বিপুল সংখ্যক শরণার্থীও রয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের পক্ষে একই সাথে এতগুলো অবস্থানে শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করা আসলেই কঠিন। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক প্রভাব যে বিরূপ তা সকলেই অবগত আছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে শরণার্থী সমস্যার পেছনের কারণ কি? এখানে শরণার্থী সমস্যার পেছনের কারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটি সামলানোর দায়িত্বও সেই দেশের সরকারের। এই ব্যাপারে সরকার অপারগ হলে সাহায্য অবশ্যই করা প্রয়োজন। কিন্তু মায়ানমার নিজের দেশের এই সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনিচ্ছুক। দাঙ্গা আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে কিন্তু মায়ানমার সরকার যেহেতু কখনোই রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয় তাই এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যদি শরণার্থী আশ্রয় প্রদান করে তাহলে বিষয়টি একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে পরিনত হবে। বাংলাদেশেও অতীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে কিন্তু কখনোই কি কোনো দেশের সীমান্ত এর জন্য খুলে দেয়া হয়েছে? সংখ্যালঘু অত্যাচার বাংলাদেশেও ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলো কখনোই সেটিকে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যায় পরিনত করেনি বরং বাংলাদেশের সরকার নিজেরাই এই অভ্যন্তরীণ বিষয় রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করেছে। তাই মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়টিকে বাংলাদেশ যদি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে পরিনত করে এবং নতুন করে শরণার্থী আশ্রয় প্রদান করে তাহলে সেটি আগের সমস্যাটিকেই আরও জটিল করবে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উত্থিত এই শরণার্থী সমস্যায় কিছু উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নিজেদের অপপ্রচার চালাতে ব্যস্ত। তারা এমনভাবে বিষয়টিকে তুলে ধরছে যাতে মনে হয়, বৌদ্ধ-মুসলমান ধর্মীয় দাঙ্গাই একমাত্র কারণ। এতে করে কিছু সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শরণার্থী আশ্রয় প্রদানে এই অপশক্তির মূল বক্তব্য হচ্ছে ধর্মীয় দিক এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের ধর্মীয় ভাই হিসেবে তুলে ধরে পুরো বিষয়টিকে একটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ হতে প্রোপাগান্ডা হিসেবে ব্যবহার করা। কিন্তু সাধারণ মানুষের এটা মনে রাখা প্রয়োজন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যদি বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় প্রদান করে তাহলে মানবিক দিক বিবেচনায় এনেই করবে, ধর্মীয় দিক নয়। আমরা সাধারণ মানুষ যদি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আমাদের দেশে আশ্রয়ের ব্যাপারে সমর্থন জানাই তাহলে তা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক দিক বিবেচনা করে, কোনো একটি বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হিসেবে নয়। আর যারা এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও নিজ হীন সাম্প্রদায়িক স্বার্থের জন্য ব্যস্ত তাদের উদ্দেশ্য যে কতোটা মানবিক তা আর বলার প্রয়োজন পড়েনা। এদের প্রতিহত করা প্রয়োজন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময়ে এই সব বিষয়ে চিন্তা প্রাধান্য পাওয়া উচিত নাকি মানবিকতা? কিন্তু পূর্ব পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় আনলে শরণার্থী আশ্রয়ের মতো ব্যাপারে সিদ্ধান্তে সরকার আসলেই একটি সংকটময় অবস্থানে পড়ছে। কিন্তু যথাসম্ভব ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য করার, বিজেবি সদস্যরা আগত শরণার্থীদের খাবার,চিকিৎসা,জ্বালানি দান করছেন। আহত শরণার্থীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এই মানবিক সাহায্য যথেষ্ট মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্রয় প্রদানের মত অবস্থা সরকারের আছে কিনা এই বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

জাতিসংঘ পর্যবেক্ষণদল মায়ানমার সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে চাইছে এবং অনুরোধ করা হয়েছে যাতে যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগত সহিংসতার দিকে তাকালেও কিন্তু আমরা ওই একই চিত্র দেখি। একটি ক্ষুদ্র বিষয় থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গার শিকার অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষ। সরকারগুলো হয়তো শেষপর্যন্ত এই ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে সক্ষম হয় কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। আর এই ক্ষতি অপূরণীয় যা কোনো আশ্বাসে কিংবা সাহায্যেই পূরণ হওয়ার নয়।

বর্তমান সময়ের মায়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করলে অবশ্যই সেই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পেত, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যেত সেটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কিনা। অনেক সময়েই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ বিবেচনায় এনে এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে সরকারকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা কিনা ঘোর মানবতাবিরোধী কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় যে মানুষগুলো বসে আছেন তাদের জন্য কাজটি যে সহজসাধ্য নয় সেটিও বোঝা প্রয়োজন।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমি সমর্থন করছিনা ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু এর পেছনের কারণগুলোকেও উড়িয়ে দিচ্ছিনা। আমি নিজে যদি এই আক্রান্ত মানুষগুলোকে কিছু সাহায্য করতে পারতাম তাহলে হয়তো কোনো কাজ হতো। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় এনে সরকার ঠিক কতটা উদার আচরণ করবে তা সময়ই বলে দিবে।

মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে অন্তত বাংলাদেশের সমুদ্রতট অঞ্চলে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক এই কামনা করবো। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় এই সকল শরণার্থীকে নিজের বাসভূমিতে নিরাপত্তা নিঃশ্চিত করে ফিরিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করা হোক এই আশাও করবো। যতই রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় আনি না কেন, দিন শেষে আমরা মানুষ। তাই মানবিক গুনাবলী ভুলে শুধু কূটনীতি বিবেচনায় আনলে যে আত্মগ্লানির সৃষ্টি হয় তার সামনে আমরা দাড়াতে পারবো কি?

এখন দেখার অপেক্ষা শুভ-অশুভের এই অসম যুদ্ধে মানবিকতার জয় হয় কিনা ??






No comments:

Post a Comment