জায়গাটা বড়, আশেপাশে নানা কিসিমের লোক। অধিকাংশ অযথাই ঘন ঘন মাথা নেড়ে অদ্ভুত স্বরে ইংরেজি বলে চলেছে। কয়েকজন অতি উৎসাহী আবার মাঝে এক উঠতি বুদ্ধিজীবিকে নিয়ে জটলা করছে। কোনায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ঘরভর্তি মানুষ দেখার একটা আনন্দ আছে। মনে হয় বিনা টিকিটের সার্কাসে আছি! অভুক্ত পথশিশুদের জন্য অনুষ্ঠানে কোট-টাই পড়া অভুক্ত লোকেদের সমাগম দেখে আস্তে করে বেরিয়ে এলাম।
এম্বুলেন্সটা অনেকক্ষণ ধরেই হর্ন দিয়ে চলেছে, কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। রিকশাওয়ালাকে বললাম চেপে জায়গা করে দিতে, অবাক হয়ে ঘুরে তাকালো। ঘন্টাখানেক ধরে ঠিক একই জায়গায় আছে গাড়িগুলো। গ্লাসের ভেতরে আবছায়া, রোগীর আত্মীয়দের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে হঠাৎ মনে পড়ল, দেশে ইমার্জেন্সি সার্ভিসের আগে দরজায় পিৎজার হোম ডেলিভারি পৌঁছে! ব্র্যান্ড কালচারের উপর ভর করে আসলেই দেশ এগিয়ে চলেছে, ভাবতে ভালোই লাগে।
শেষ পর্যন্ত হাঁটুজল পার করে আসতে হলো, মেজাজ পুরো খিঁচে আছে। ধুর, এভাবে আর কদ্দিন? ড্রেনের গন্ধে নাক কুঁচকে তাকালাম। অজস্র মানুষের ভিড়ে এক কোনে বৃদ্ধ একজন, হাতে শতছিন্ন ছাতা আর সামনে রাখা টুকরিতে কিছু সবজি, ড্রেনের পাশেই কোনমতে জায়গা করে নিয়েছে। ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে জনস্রোতের দিকে। ভাবলাম, ঘ্রানের মতো স্বাভাবিক অনুভূতিগুলোও, কারো কারো জন্য শুধুই বিলাসিতা।
বেশ রাত হলো, এখন বৃষ্টির জোর অনেক। বারান্দায় বসে পিচের রাস্তায় বৃষ্টির দাপট দেখছি। আগে বারান্দা থেকে দূর পর্যন্ত দেখা যেতো। রাস্তার ঐদিকটায় কিছু গাছ ছিলো, উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলো সেগুলো। তাই এখন শুধু ইটের গাঁথুনি চোখে পড়ে। স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোগুলো আগে হলদেটে ছিলো এখন সাদা। বদলেছে অনেক কিছুই।
একটা রিকশা টুং-টাং করতে করতে চলে গেলো। এতো রাতে!
চেয়ারটা ছেড়ে উঠতে উঠতে মনে হলো, অজস্র মানুষের ভিড়ে দিনশেষে আমরা সবাই ভীষণ একা। এই অনুভূতিটা বদলায়না, কিংবা বদলে দেয়া যায়না।
No comments:
Post a Comment