Thursday, October 11, 2012

মালালা ইউসাফযাই তোমাকে স্যালুট





মাত্র ১৪ বছরের মেয়েটিকে মাথায় এবং ঘাড়ে গুলি করা হয়েছে হত্যার জন্য। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘসময় মেয়েটি মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে। চার ঘন্টার দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসকরা তার মাথা থেকে শেষপর্যন্ত গুলি বের করতে সক্ষম হয়েছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে এখন সে। যে মেয়েটিকে এই অল্প বয়সেই কট্টরপন্থী উগ্রবাদী তালেবানদের রোষের শিকার হতে হয়েছে তার নাম মালালা ইউসাফযাই। শুধু মালালাই নয় গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে তার আরও দুজন সহপাঠিনী। হয়তো এই যাত্রায় বেঁচে যাবে মালালা। কিন্তু তারপর?

এই অমানবিক-নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায়। যেখানে তালেবানদের একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য বজায় ছিলো দীর্ঘকাল। এখনও যেখানে প্রায়শই হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা।

এরই মাঝে তালেবানরা আবার হুমকি দিয়েছে, মালালাকে বাঁচতে দেয়া হবেনা। যেভাবেই হোক, তাকে হত্যা করা হবে। মেয়েটির মা তাই পাকিস্তান সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। মালালার প্রতি এহেন নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ সহ আরও অনেকেই। কিন্তু এই প্রতিবাদ কি যথেষ্ট?

কি অপরাধ ছিলো মালালা নামের মেয়েটির? সে মাত্র ১১ বছর বয়স থেকে ব্লগ লিখত। আর লিখত তাও আবার তালেবানদের বিরুদ্ধে, ধর্মের আইন প্রতিষ্ঠার নামে তাদের অত্যাচার এর বিরুদ্ধে। সে লিখত নারীশিক্ষার সমর্থনে, লিখত সেকুলার একটি সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই যে সোয়াত উপত্যকায় তালেবানদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজিনা, সেখানে এরকম ছোট্ট একটি মেয়ের সাহসী প্রতিবাদ কি করে মেনে নিবে সন্ত্রাসীরা? তাই বয়স কোন ব্যাপার না, সে শিশু হোক আর বৃদ্ধ চালাও গুলি, হত্যা করো, নিঃশ্চিহ্ন করে দাও তাকে পৃথিবীর বুক থেকে। কারন সে শিক্ষার কথা বলে, উন্নত সমাজের কথা বলে। মধ্যযুগীয় বর্বরতা যাদের লক্ষ্য তাদের কাছে এর থেকে বড় হুমকির বিষয় আর কি হতে পারে? তার উপরে সে নারী!!

এই তালেবানরাই কদিন আগে আফগানিস্তানের একটি মেয়েদের স্কুলে পানীয় জলে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলো, আক্রান্ত হয়েছিল অর্ধশতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী। কেন? কারণ নারীশিক্ষা তাদের জন্য ভীতিকর। তারা চায়না, নারীরা শিক্ষিত হোক, মাথা উঁচু করে বাঁচুক। তারা চায়, নারীরা আপাদমস্তক নিজেদের আচ্ছাদনে আবৃত করে সারাদিন পুরুষের হুকুমে চলবে আর রাতে তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করবে। নারীরা তাদের কাছে ভোগ্যবস্তু ছাড়া বেশি কিছু তো নয়!!

তাই মালালাকে গুলি করে তাদের দাম্ভিক স্বীকারোক্তি। তাদের মুখপাত্র জানায়, মালালা তদের জন্য শত্রু। সে নারীশিক্ষার কথা বলে, সে পাশ্চাত্যের মুখপাত্র। তাই তাকে হত্যা করা জায়েজ।

মুখপাত্র ইহ্সানুল্লাহ ইহসান এর মতে,


“Any female that, by any means, plays a role in the war against mujahideen should be killed,” said Taliban spokesman Ihsanullah Ihsan, using the term for Islamic holy warriors to refer to the Taliban.

“We are dead against co-education and a secular education system.”


ঠিক কতোটা ধর্মান্ধ, উগ্র-মৌলবাদী হলে এধরনের আচরণ সম্ভব!! নারীদের পশুর মতো ব্যবহার করা যাদের কাছে সাধারণ বিষয়, নারীদের যারা ভোগ্যপণ্য ছাড়া বেশি কিছু ভাবতে নারাজ তাদের থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করাও বোকামি।

আজকে সমগ্র বিশ্বজুড়ে কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের সব থেকে বড় ভয় নারীশিক্ষা। নারীদের অগ্রযাত্রা তারা ভয় পায়। পিঞ্জরবন্ধী নারীরা যদি শিক্ষিত হয়ে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে সমাজে অবদান রাখা শুরু করে তাতে পুরুষশাসিত সমাজে তাদের অন্ধবিশ্বাস ছড়ানো বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান এরকম সবগুলো দেশেই মৌলবাদীদের প্রধান লক্ষ্য নারীদের গৃহবন্ধী করে রাখা। তাদেরকে শিক্ষা থেকে যথাসম্ভব দুরে রাখা। তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা, মানসিকতাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে তাদের শুধুমাত্র যৌনদাসী বানিয়ে রাখা।

এদের চোখ রাঙানি আর ভয়কে অগ্রাহ্য করে তাই নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। মালালা ইউসাফযাই এর মতো এক একজন প্রতিবাদী নারীই পারবে সমাজের এই অবস্থা পরিবর্তন করে নিজেদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। নিজেদেরকে অন্ধকুপে আবদ্ধ না রেখে, দাসত্বের বিরুদ্ধে, নিজেদের জীবনের প্রয়োজনে এই ঘৃণ্য মানসিকতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

যখন একজন ১৪ বছরের মালালা ইউসাফযাই, অস্ত্রধারী জঙ্গি তালেবানদের ভিত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম, তখন বোঝা উচিত পৃথিবীর ৮৮৪,২৬৮,৩৭৮ জন নারী ঐক্যবদ্ধভাবে আরও কতোটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।


খবরের লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment