Tuesday, April 3, 2012

স্বপ্ন কিংবা অলীক বাস্তব

রাত-১

বিভৎস একটা দুঃস্বপ্নে ঘুম থেকে উঠে বসলাম, গলা শুকিয়ে গেছে, পাশেই রাখা জলের বোতলটা থেকে জল নেয়ার মতো অবস্থাটাও নেই, যেনো শেকড় গজিয়ে গেছে শরীরে| কোনমতে কাঁপা কাঁপা হাতে জলের বোতলটা নিলাম, চোখ বন্ধ করে মুখে দিয়ে ঢোক গিলতেই তীব্র যন্ত্রনায় সারা শরীর ফেটে পড়তে চাইলো, জল নয়, যেনো তপ্ত সীসা গলা বেয়ে নেমে যাচ্ছে| চিত্কার করে উঠতে চাইলাম, গলা দিয়ে গোঙানির মতো অস্ফুট কিছু শব্দ বের হয়ে এলো, ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম এবার, বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম|

রাত-২

প্রচন্ড গরম পড়েছে, ঘরের জানালাটা দিয়ে বাতাসটাও যেনো রেশনের চালের মতো মেপে মেপে ঢুকছে, হলদেটে চাঁদটার দিকে চোখ কুঁচকে তাকালাম, সামনের হালকা জঙ্গলে ঢাকা বাগানটায় গাছগুলোর সব অদ্ভুত ছায়া, নিজেকে অলীক পরাবাস্তবতার মাঝে আটকে পড়া এক জন্তু বলে মনে হচ্ছে| হঠাৎ মৃদু বাতাসে পাতাগুলো কেঁপে উঠতে মনে হলো কোনো প্রেতাত্মার দীর্ঘশ্বাস, আজকের রাতটাও নির্ঘুম কাটবে বোঝা যাচ্ছে|


রাত-৩

কালো, রোগা-পটকা, কিম্ভূত চেহারার যে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে পরম তৃপ্তিতে দাঁত খোঁচাচ্ছে এর নাম "চুন্নু", হ্যাঁ, স্রেফ চুন্নু, এর আগেও কিছু নেই, পরেও কিছু নেই| একে দেখে মনে হচ্ছে দাঁত খোঁচানোর অলিম্পিকে যোগ দিতে যাচ্ছে| প্রচন্ড রাগে মাথার ডান পাশের শিরাটা দপ দপ করছে আমার| এবার চুন্নু মুখ খুললো|

"১০,০০০ লাগবো"
এতো ??
হ এতই, মেশিনের দাম বাড়ছে, ভাড়াও বাড়ছে|
নিবো তো একরাতের জন্য !!
একরাত আর দুইরাত, সব একই রেট|
ঠিক আছে|
সাথে কিন্তু খালি দুই দানা|
চলবে|

এবার কুতকুতে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে চুন্নু, আমার মোটা কালো চশমার ফ্রেমটা হয়তো পছন্দ হয়নি এর, কে জানে| এবার ধীরে ধীরে বলে, "কাহিনী কি? এইসব জিনিস কিন্তু খুবই রিস্কি, আপনের কি কামে লাগবো কন তো?" "সেটা আপনার জানার দরকার আছে কি?"- আমি বিকৃত মুখে বললাম| অনেক কষ্টে জিভের ডগায় এসে যাওয়া অশ্রাব্য গালিটা আটকালাম| "না, তবে সিনেমাতে যেমন দেহেন কাহিনী কিন্তু সেরম না, গুল্লি একবার বাইর হইলে কিন্তু কাহিনী উল্টায় যাইবো কইলাম|" আমি কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে দেখলাম, "জানি, মাথায় গুলি করলে কপালের ঠিক মাঝখানে যে সুন্দর একটা গোল ছিদ্র দেখায় তা পুরো কাহিনী না, গুলি বের হওয়ার সময় খুলির ঠিক পেছনে একটা বড়সড় গর্ত করে দেয়, মগজ আর রক্ত চারিদিকে ছিটকে বের হয়| জিনিসটা মোটেও সুন্দর না|" চুন্নু পুরো কথাটা মুখ হা করে শোনে, আমি একটা বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে ওর সামনে থেকে উঠে আসি|


রাত-৪

রাস্তার এইদিকের বাড়িগুলোর চেহারা অন্যরকম, ঝা-চকচকে, আভিজাত্যের ছোঁয়া| ১০ নাম্বার বাড়িটায় কি করে ঢুকবো এটা বের করতে আমার পাক্কা ১ মাস লেগেছে| আজকে অপেক্ষার শেষ| দোতলার ঘরটায় ঢুকলাম| অন্ধকারে দরজার উল্টো দিকের চেয়ারটায় বসে এখন আসল খেলার অপেক্ষা| প্রায় ঘন্টাখানেক পরে পায়ের আওয়াজ| খুলে গেলো সামনের দরজাটা| ঘরে ঢুকে লাইটের সুইচটা অন করতেই আমাকে দেখে চমকে উঠে পিছিয়ে গেলো সে| আমি ইশারায় আমার হাতে ধরা কালো যন্ত্রটার দিকে দেখালাম, চুপচাপ দরজা বন্ধ করে আমার উল্টো দিকে পেতে রাখা চেয়ারটায় এসে বসলো মানুষটা| ঠিক এই মুহূর্তটা অসংখ্যবার চিন্তায় নেড়েচেড়ে দেখতে চেয়েছি, কিন্তু না, এর সাথে কোনো মিল নেই| বাকরুদ্ধ মানুষটা জানে কি জন্য এসেছি আমি, জানে তার সময় শেষ| আস্তে করে উঠে গিয়ে ঠিক কপালের মাঝখানটায় নলটা ছোঁয়ালাম| দেখতে পাচ্ছি কপালের দুপাশ বেয়ে দরদর করে ঘাম পড়ছে তার| মুখে পৈশাচিক একটা হাসি এনে রিভলবার এর হ্যামারটা পিছন দিকে টানলাম, ক্লিক করে একটা শব্দ হলো, পিনপতন নিস্তব্দতায় সেটাই অনেক জোরালোভাবে শোনা গেলো| মানুষটার চোখ বন্ধ হয়ে গেছে, আলতো করে ট্রিগারটা টেনে দিলাম|


দরজা খুলে বের হওয়ার আগে পিছন ফিরে একবার দেখলাম, চেয়ারে ঠিক আগের অবস্থাতেই বসে আছে সে, বের হওয়ার আগে বললাম, "ভেজা প্যান্টটা বদলে নেবেন, নয়তো গন্ধ ছড়াবে !!!" কয়েক মুহুর্তের বিভীষিকায় থরথর করে কাঁপতে থাকা লোকটাকে দেখে হাসি পেলো|


রাস্তায় কেউ নেই, প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়লাম আমি, কোনার সঙ্গীহীন কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠলো দুবার| আজকেও আকাশে জন্ডিসে আক্রান্ত সেই হলদেটে চাঁদটা, বাস্তবতার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে যেতে নিজেকে হঠাৎ খুব সুখী মনে হলো|


রাত-৫

বিভৎস একটা দুঃস্বপ্নে ঘুম থেকে উঠে বসলাম, গলা শুকিয়ে গেছে, পাশেই রাখা জলের বোতলটা থেকে জল নেয়ার মতো অবস্থাটাও নেই, যেনো শেকড় গজিয়ে গেছে শরীরে| কোনমতে কাঁপা কাঁপা হাতে জলের বোতলটা নিলাম, চোখ বন্ধ করে মুখে দিয়ে ঢোক গিলতেই তীব্র যন্ত্রনায় সারা শরীর ফেটে পড়তে চাইলো....... !!

1 comment:

  1. ভাই ভাল আছেন। ভাল লাগলো আপনার লেখাটা

    ReplyDelete