Friday, July 6, 2012

"বিবর্তন" তুমি মোরে করেছ মহান !!


বিবর্তন বেশ মজার একটা বিষয়। আমি বিবর্তন নিয়ে পড়তে ভালো পাই, নানা বই, তথ্য কিংবা তথ্যচিত্র যখনই হাতের কাছে পাই সংগ্রহে রাখি। তাই সচলের প্রথম দিকে সাহস করে লিখেই ফেলেছিলাম "বিবর্তন সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা এবং তার উত্তর" লেখাটি। এরপরে কিছু হাউকাউ এর পরে ভাবলাম, এই বিষয়ে একটা ধারাবাহিক লেখা নামানো যাক। কিন্ত মানুষ যা ভাবে তা কি আর হয়! তাই প্রথম "বিবর্তন-১ : একটি ধারণার সূচনা"- লেখাটির পরে আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় লেখাটি হয়ে উঠলোনা। কিন্তু কাহাতক আর দেরি করা যায়, ধারাবাহিক না হয় হচ্ছেনা কিন্তু মাঝেসাজে প্যাকেজ নাটকের মতো দু-একখানা লেখা তো লেখাই যায়। তাই ভাবনাচিন্তায় আর বেশি সময় নষ্ট না করে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিবর্তন আমাদের দেহে আরও কি কি সুবিধে-অসুবিধে করে দিয়েছে এই নিয়ে একটা ছোটখাটো লেখা দেয়া যাক। আমার প্রথম লেখায় অনেকেই অভিযোগ করেছিলো, বিষয়বস্তুটা আরো সহজ করে লিখলে নাকি ভালো হয়। তাই এবার ভাবলাম "হাসতে-হাসতে বিবর্তন" এই ধরনের কিছু একটা লিখে ফেলবো। কিন্তু আমি তো "চরম উদাস" নই, রম্যরচনায় আমার অবস্থা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর মতো। তাই খুব বেশি চাপ না দিয়ে (!!), যতোটা পারি সহজ করেই আজকের বিষয়বস্তুর অবতারণা করার ইচ্ছা পোষণ করি। তাতেও যদি কঠিন-কঠিন লাগে তাহলে দোষ আমার না, দোষ হচ্ছে ওই ব্যাটা শাখামৃগগুলোর!!

বিবর্তন আমাদের প্রানীজগতে সুবিধের পাশাপাশি অনেক অসুবিধেও করে দিয়েছে। এই যেমন মানুষের কথাই ধরি। বিবর্তনের ফলে আজকে আমরা যেমন উন্নত একটি সভ্যতা তৈরী করেছি, তেমনি বহন করে চলেছি কিছু দৈহিক অসুবিধেও। এর সবটাই কিন্তু বিবর্তনের ফল। সঠিকভাবে বুঝতে গেলে বিবর্তনের একদম প্রথম থেকে জানা জরুরি। কিন্তু ৯টা-৫টা ডিউটি সেরে আর কতো ধৈর্য্য থাকে এইসব নিয়ে গুঁতোগুতি করার? তার উপরে আবার "আদমের পঞ্জরাস্থি হতে ইভের আগমন" তত্বে বিশ্বাসীদের জন্য তো কোনো প্রমানই যথেষ্ট নয়। তারা সব কিছুতেই "ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন" খুঁজে বেড়ায়! তারা সারাদিন ফসিলের মিসিং লিঙ্ক নিয়ে আস্ফালন করে। দুইটা ফসিলের মাঝে একটা মিসিং লিঙ্ক নিয়ে একাধিক তর্কে লিপ্ত হয়। তারপর ওই দুই ফসিলের মাঝে আরও একখানা ফসিল আবিস্কার করে বিজ্ঞানীরা যখন একটু হাসিহাসি মুখ করে ছবি তুলতে যান, তখনই তেড়েমেড়ে এসে বলা শুরু করে, আরে হতভাগা আগে দুই ফসিলের মাঝে ছিলো একটা মিসিং স্পট এখন তিন ফসিলের মাঝে দুইটা মিসিং স্পট কি চোখে পড়েনা? কি আর করা!! তার উপরে "জোকার নায়েক ফ্যানক্লাব" তো ঘোষণাই করে দিয়েছে, বিবর্তন একটি বাতিল তত্ত্ব। যখন জোকার নায়েকের মতো মহাজ্ঞানী এধরনের কথা বলেন তাতে আমাদের মতো অকালকুষ্মান্ডদের সম্মতি জানানোই শ্রেয়, কিন্তু ওই যে, পূর্বপুরুষদের লেজখানা যে কারো কারো মাঝে আজো বিদ্যমান, তাই শান্তি কোথায়?

সবাই নিঃশ্চয়ই এতক্ষণে ভেবে বসে আছেন, কি যা তা বকে চলেছে!!নাহ, ভয় পাওয়ার কারণ নেই, সবুরে যেমন ভালো ফল পাওয়া যায়। তেমনি একটু বেশি সবুরে কিন্তু বিবর্তন পাওয়া যায়। বিশ্বাস করুন, ডাইনোসরের কসম!! যাই হোক, আজকের বিষয়বস্তু হচ্ছে, বিবর্তনের ফলে মানবদেহে কি কি অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভেবেছিলাম লেখার শিরোনাম দিবো, "বিবর্তন-তুমি মোরে দিয়েছো বাঁশ", কিংবা "যেভাবে বিবর্তন আমাদের ইয়ে মারিয়া দিয়েছে", কিন্তু কোনো শিরোনামই মনঃপুত না হওয়ায় আপাতত ওই চিন্তা বাদ। মোটামোটি পাঁচটি বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করবো, যাতে বুঝতে সুবিধে হবে, বিবর্তনের ফলস্বরূপ মানবদেহে নানাবিধ প্রতিক্রিয়া। তাহলে "বাবা ডারউইন" এর নামে শুরু করা যাক।

[b]১. মানুষের অন্ডথলিতে আঘাতপ্রাপ্ত হলে দিনের বেলাতেও তারা দেখে কেন?[/b]

হুমম, শিরোনাম দেখেই নিঃশ্চয় ভাবছেন, কি ছেলে রে বাবা, শুরুতেই লুঙ্গি ধরে টানাটানি!! নাহ, ভয়ের কিছু নেই, কারো লুঙ্গি বিসর্জন হচ্ছেনা আপাতত।
তার আগে এই ছবিটা দেখুন ভালো করে-

6319458.bin

দেখে কি ভাবছেন? হয়তো ভাবছেন, আবোল-তাবোল বকে একদম মাথাটা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই তো? নাহলে কি ফুটবলের ছবি দিয়ে বিবর্তন দেখাতে আসে!! উহু, মোটেই তা নয়, বরং ছবিটা ভালো করে আবার দেখুন। কিছু নজরে পড়লো? কেন দেখতে পাচ্ছেননা, লোকগুলো কিরকম বিশেষ জায়গায় হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত? এরকম তো সব খেলাতেই দেখা যায়, এ আর নতুন কি। কিংবা কোনো ঢিশুম-ঢিশুম একশন ছবি দেখতে ব্যস্ত? ভিলেনকে মারতে গিয়ে নায়কের গুলি ফুরিয়ে গেছে? এবার কি হবে ভেবে নিজের চুল টানছেন? হঠাৎ দেখলেন, নায়ক ভিলেনের দুই পায়ের মাঝখানে দিলো এক মোক্ষম লাথি। আর তাতেই ভিলেন বেচারা ওরে মারে-বাবারে করে পপাত্ধরনিতল!! ভাবছেন বেশ করেছে। কিন্তু সাথে সাথে এটাও ভাবুন, এরকম একটা স্পর্শকাতর জিনিসকে দেহের বাইরে শোকেসে ঝুলিয়ে রাখা কেন? এইতো প্যাঁচ লেগে গেলো তো? চিন্তা নেই ওই প্যাঁচ ছাড়াতেই তো লিখছি।

uroMaleScrotumGrayBB1143

[মানব দেহের পুরুষ প্রজাতির প্রাণীর অন্ডথলি]

পুরুষ দেহের সব থেকে স্পর্শকাতর অঙ্গটি হচ্ছে এই অন্ডথলি। এর ভেতরে থাকে অন্ডকোষ। এই শুক্রাশয়ে উত্পন্ন হয় নতুন প্রাণ সঞ্চারকারী শুক্র। কিন্তু এই মহাদরকারী জিনিসটিকে এরকম অরক্ষিত অবস্থায় রাখা কেন? এটাকে দেহের ভেতরে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যেতো। তখন হঠাৎ এরকম বেকায়দা আঘাতে সমস্যাও হতোনা। নিদেনপক্ষে একখানা হাড়ের খাঁচা তো তৈরী করে দেয়া যেতো। কিন্তু না, তা হয়নি। কারণ, শুক্রগুলোর বেঁচেবর্তে থাকার জন্য একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার। দেহের ভেতরে তো আর এসি লাগানো নেই। বরং সারাদিন নানা খাটুনির কারণে দেহের ভেতরটা থাকে উত্তপ্ত। তাই দেহের বাইরের এই জায়গাটিই কিছুটা ঠান্ডা থাকে। এর তাপমাত্রা দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থেকে কয়েক ডিগ্রী কম। আর ঐটুকুই যথেষ্ট। তাই এরকম ভাবে রাখার বন্দোবস্ত হয়েছে। কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়, শুক্র উত্পন্ন হতে যেমন একটু কম তাপমাত্রা আবশ্যক তেমনি, শুক্র নির্গত হতে প্রয়োজন একটু বেশি তাপমাত্রার। কিন্তু কি করে সম্ভব? সম্ভব, সবই সম্ভব। যখন পুরুষ স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের জন্য উত্তেজিত হয়, তখন দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। সাথে সাথে অন্ডথলিটিও কিছুটা সংকুচিত হয়, আর লিঙ্গের উত্থানের ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে করে শুক্র নির্গমনের জন্য দরকারী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ব্যাস, ঐটুকুই যথেষ্ট। বেশি বিস্তারিত দিতে গেলে আবার সেন্সর বোর্ড কাঁচি চালাবে।

04b_sperm_cell

[স্পার্ম সেল]

আলোচনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এবার এসে বলবেন, তো সব প্রাণীর কি একই অবস্থা!! না, সব প্রাণীর নয়। প্রজাতিভেদে বিভিন্ন প্রাণীর লিঙ্গের আলাদা আলাদা গঠন রয়েছে। এবার বলে বসবেন, তাহলে কি সবাই লাথি খেলে ওরকম গড়িয়ে পড়ে? আমি বলবো, আসুন একে লাথি মেরে দেখুন-

bull

আর লাথি মারতে যাওয়ার আগে, এর পেছনের দুখানা পা, তার খুড় এবং সামনের দুখানা শিং-এর কথা ভুলবেননা যেনো। আর আপনি যাতে খুব সহজে লাথি মারতে না পারেন তার জন্য ওই লেজটি কিরকম ঝুলছে দেখুন!

আর হ্যাঁ, যারা এই লেখাটি নিজের ল্যাপটপে আরাম করে পড়ছেন, তাদের জন্য-

Laptop-on-your-lap

যদি এভাবে বসে থাকেন, তাহলে শীঘ্রই জায়গা পরিবর্তন করুন। ল্যাপটপের নিচের দিকে যে পরিমান তাপ উত্পন্ন হয়, তার উচ্চ তাপমাত্রা আপনার শুক্রাশয়ের শুক্রগুলোকে ফ্রাই করার জন্য যথেষ্ট। যদি জন্মের আগেই বেচারাদের এভাবে হত্যা করতে না চান তাহলে এভাবে বসার আগে দ্বিতীয়বার ভাববেন আশা করি!

আর যারা মানবদেহের এই অঙ্গটির ঝুলন্ত অবস্থান নিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঝোলাঝুলি করতে চান তাদের জন্য এইটা

যারা এই অংশটুকু পড়ে আমাকে শালীনতার শত্রু মনে করে বসে আছেন, তাদের জন্য বলছি। আমি খুবই দুঃখিত। এর থেকে সুশীলভাবে আমি লিখতে পারতামনা। কি আর করবো বলুন, আমি যে সুশীল সমাজের কেউ নই!! বরং পরের বিষয়ে যাই।

[b]২.ক্লোজআপ হাসি হাসার আগে আমাদের ১০০ বার ভাবতে হয় কেন?[/b]

ভেবে দেখুন, দাঁতের যন্ত্রনায় আমরা কষ্ট কে না পাই। যন্ত্রণা কি শুধু এক ধরনের? নানা ধরনের যন্ত্রনায় ফেলে এই দাঁতগুলো। দাঁত কেলিয়ে হাসতে গেলে নিজের দাঁতের উঁচু-নিচু টিলা আকৃতির কথা চিন্তা করে অনেকেই মুখে হাত দিয়ে আড়াল করি কিংবা মুখ টিপে ফিচকে মার্কা হাসি দেই। আজকাল টিভির মডেলরা কিরকম ঝকঝকে মার্বেল এর মতো বাঁধানো দাঁত দেখিয়ে খেক খেক করে হাসে!! আবার পেস্ট এর বিজ্ঞাপনে যাওয়ার আগে বলে যায়, আমার মতো প্রাণখুলে (নাকি দাঁত খুলে?) হাসতে চাইলে ব্যবহার করুন অমুক-তমুক পেস্ট। আমরা ভাবি, ধুর, ওরকম সাদা দাঁত না হয় হলো, কিন্তু এদের আকার-আকৃতির কি হবে? এর জন্যে আবার পকেট ফুটো করতে দৌড়াই দাঁতের ডাক্তারের কাছে। আর দাঁতের ডাক্তারও ভালো মানুষের মতো একখানা "ব্রেস" লাগিয়ে দিয়ে জ্ঞানীর মতো মাথা নাড়তে থাকে। আমরা দাঁতের উপরে অদ্ভুত আকৃতির জিনিসটি বসিয়ে আরও কিছুদিন মুচকি হাসার পণ করে চলে আসি সুরসুর করে। আবার কখনো আক্কেল দাঁত নামক মহাযন্ত্রণার এই জিনিসটি আমাদের কাঁদিয়ে মারে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, "ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের" ইন্টেলিজেন্ট কর্তা আমাদের দাঁত নিয়ে এরকম দেঁতো কাজকর্ম কেন করে রেখেছেন? এইরে ধর্মানুভুতিতে আঘাত দিয়ে ফেললাম নাতো কারো? থাক, বরং বিবর্তনকে আঘাত করি, অন্তত ঢিল মেরে পাটকেল খেতে হবেনা এখানে।

human_skull_side

[মাথার খুলির গঠন]

বিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের পূর্বপুরুষদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি হতে থাকে। আয়তনে বাড়তে থাকে দ্রুত। অন্য প্রানীদের তুলনায় আমরা মস্তিষ্কের অনেক বেশি ব্যবহার করেই কিন্তু জয় করেছি এই পৃথিবী। আর চিন্তা করে দেখুন, পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মস্তিষ্কের ওজন হচ্ছে ১,৩০০ গ্রাম থেকে ১,৪০০ গ্রাম। এই ওজনের একটা জিনিস ঐটুকু খুলির ভেতরে আটকে রাখাটা কি চাট্টিখানি কথা! আর একদম প্রথম থেকেই কিন্তু এরকম ছিলোনা। ধাপে ধাপে হয়েছে এই পরিবর্তন। আগে একটা সময় আমরা সম্পূর্ণ তৃনভোজী ছিলাম। নির্ভর করতাম শাক-পাতা, ফল-মূল এসবের উপরে। এর সব কিছুই ছিলো শর্করাভিত্তিক খাবার। তাই অল্পতে কি পোষায়? সুযোগ পেলেই ধুমসে চলতো পেট পুজো। আর পুষ্টির জন্য এহেন অল্প সময়ে বেশি বেশি খাবারের কারণে আমাদের
প্রয়োজন ছিলো শক্তিশালী দাঁত। আক্কেল দাঁত ঠিক একারণেই কাজে লাগতো। আর আমাদের মুখের আকৃতিও ছিলো খুলির থেকে কিছুটা আগে বাড়ানো। কারণ প্রচুর শর্করা আমাদের চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হতো। তার জন্য জায়গা প্রয়োজন। আর এতো চিবানোর জন্য আমাদের চোয়ালও ছিলো সেরকম। কিন্তু এতো খাদ্য হজম করতে লাগে বড়সড় একটা পাকস্থলী। কিন্তু বড় পাকস্থলী আর বড় মস্তিস্ক যেকোনো একটা পেতে পারো। এটা তো আর ফ্রির জিনিস নয় যে, চাইলেই সব পাবে।

একটা সময়ে শর্করা খাবারের ঘাটতি দেখা দিলো, গাছে চড়ে ঘুরে বেড়ানো পূর্বপুরুষরা নেমে এলো তৃণভূমিতে। দু পায়ে হাঁটতে শিখলো আস্তে আস্তে। এরই মাঝে আজ থেকে প্রায় ২.৩ মিলিয়ন বছর আগে আমাদেরই কোনো এক পূর্বপুরুষ কোনো এক প্রাণীর দিকে তাকিয়ে বললো , "ঐ তো মাংস। চলো ট্রাই করি!" হ্যাঁ, এভাবেই একটা সময় শুরু হলো মাংস ভোজন। প্রয়োজনের তাগিদে প্রোটিনের দিকে ঝুঁকে পড়লো তারা। আর এতে নানা ধরনের সুবিধে হলো, অল্প পরিমান খাদ্যতেই দেহের প্রয়োজন সম্পূর্ণ হতে লাগলো। এখন আর বেশি বেশি শর্করা না খেলেও হচ্ছে। আবার খালি হাতে বাঘ-সিংহের সাথে পাল্লা দিয়ে শিকার করতে অসুবিধে তাই মাথা খাঁটিয়ে বের করতে লাগলো পাথড়ের অস্ত্র। মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থের আলোড়নে একসময় আগুনও জ্বালাতে শুরু করলো। এভাবেই প্রয়োজন ফুরিয়ে এলো আক্কেল দাঁতের এবং বড় চোয়ালের। কিন্তু ঐ বেঢপ্ বড় মস্তিস্কটিকে জায়গা দিতে গিয়ে খুলির আকৃতি পরিবর্তন হতে শুরু করলো আর সাথে সাথে ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চাইলো দাঁত এর সারি, সামনের দিকে। আর এভাবেই আঁকাবাঁকা হয়ে আজকের দিনের আকৃতি ধারণ করলো আমাদের দাঁতের পাটি।

dentition_custom

বিভিন্ন শর্করাভোজী প্রাণীর সাথে তাই আমাদের চোয়ালের সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেলো। যেমন, মাংসাশী হওয়ার কারণে আমাদের সামনের দিকের দাঁত কিছুটা দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পেলো মাংস ছিড়ে খাওয়ার জন্য, যাকে শ্বদন্ত বলা চলে। তাই ভ্যাম্পায়ার কিংবা ড্রাকুলা দেখার জন্য পেনসিলভানিয়া যাওয়ার প্রয়োজন নেই। একটা টর্চ হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে মুখ খিচে নিজের দাঁতগুলো দেখুন আর চমকে উঠে হরর মুভি দেখার স্বাদ নিন!

human-teeth-dental-chart

আরও ভালো করে দেখতে চাইলে এই ছবিতে দাঁতগুলো দেখে নিন এরপরে গুনে গুনে দেখুন তো ৩২খানা আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে অতি অবশ্যই উচ্চ আদালতে বিচার জানাতে পারেন, তবে তাতে দাঁত ফেরত পাবেন কিনা তার কিন্তু গ্যারান্টি নেই।

তবে হ্যাঁ, মাংস খাওয়ার শুরু করাতে মানুষ কিন্তু উন্নত হয়েছে সময়ের সাথে সাথে। দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অভাব পূরণ হওয়ার সাথে সাথে মানুষ শিকারের জন্য অস্ত্র বানাতে শিখেছে। শিখেছে মস্তিস্ক খাটিয়ে নানা রকমের ফন্দি-ফিকির বের করতে। এতে মস্তিষ্কের যেমন উন্নতি সাধন হয়েছে একই সাথে উন্নত হয়েছে সভ্যতা। তাই দুঃখিত নিরামিষাশী বন্ধুরা আপাতত আজকের জন্য আপনাদের সমর্থন জানাতে পারছিনা। আপনাদের পূর্বপুরুষরা মাংস না খেলে আজকে হয়তো আপনি "ভেজিটেরিয়ান" হওয়ার জায়গায় আসতে পারতেননা। তাই আজকে নাহয় কিছুটা "নন-ভেজ" চলুক।

teeth

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দাঁতের গঠন দেখে নিন এই ফাঁকে। তবে এখনও কিন্তু শর্করাভোজী প্রানীদের চোয়ালের আকৃতি আমাদের থেকে বড়। যেমন- ঘোড়া কিংবা গরু। স্বাভাবিকভাবেই এদের প্রচুর পরিমান শর্করা চিবিয়ে দেহের উপযোগী করার জন্য বড় আকৃতির চোয়ালের প্রয়োজন। আমাদেরই এক বন্ধু সাত সকালে ব্রেকফাস্টের পরে কিরকম "ক্লোজআপ" হাসি দিয়ে ছবি তুলেছেন দেখুন-

4

আর যারা এখনও নিজের দাঁতের কিম্ভূত আকৃতি নিয়ে বেশ মন খারাপ করে আছেন তাদের জন্য বলি, কেনো অযথা মন খারাপ করছেন। ঐ টিভি কিংবা বিজ্ঞাপনে যাদের সুন্দর সাজানো দাঁতের পাটি দেখছেন তার সবগুলোই হচ্ছে কৃত্রিম। ডাক্তারকে অযথা অনেক টাকা গচ্চা দিয়ে করা। তার থেকে বরং নিজের দেহে যা আছে তাই নিয়ে খুশি থাকুন। আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের কীর্তি বহন করে চলেছেন এটাই বা কম গর্বের নাকি?!

ও এখন বলবেন তো, ব্যাটা, বিবর্তনের জন্য পূর্বপুরুষদের মস্তিস্ক আকৃতিতে বৃদ্ধি পেলে আমাদেরটা কি দোষ করলো রে হতভাগা!! না কোনো দোষ করেনি, তাইতো ভেতরে ভেতরে জটিলতা বাড়িয়ে তৈরী করেছে ১০০ বিলিয়ন নিউরনের এক অসাধারণ নেটওয়ার্ক। কি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি? সমস্যা নেই, ওরকম অনেক কিছুতেই কষ্ট করতে হয়, নাহলে কি আর সুফল মেলে? দাঁত নিয়ে দাঁতাদাঁতি আরনা-আরনা। চলুন অন্য বিষয়ে।

[b]৩. গলায় খাবার আঁটকে গেলে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হয় কেন?[/b]

গলায় খাবার আঁটকে গিয়ে নাকের জল-চোখের জল এক হয়নি এরকম মানুষ পৃথিবীতে কমই আছেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটাও বিবর্তনের দোষ। তার আগে জেনে রাখুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ৩,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন শুধু এই কারণে। একবার চিন্তা করে দেখুন কি যাচ্ছেতাই ব্যাপার।
তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে কিংবা খেতে খেতে হাসতে গিয়ে হঠাৎ করেই কাশতে কাশতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাড়াতাড়ি কোনমতে গলায় আটকে থাকা খাবারটা সরাতে পারলেই যেনো জীবন বাঁচে। এই কারণের পেছনে কিন্তু আছে মানবদেহের একটি মহান উন্নতি। আর তা হচ্ছে, আমাদের কথা বলতে পারার ক্ষমতা!
ভাবছেন, কি বিটকেলে ব্যাপার-স্যাপার। হবেই তো, এতো সহজ হলে তো আর এতকিছু লিখতে হতোনা।

17107_6354_5

আমাদের গলায় যে ভোকাল কর্ড আছে এর জন্যেই আমরা কথা বলতে পারি, এটা তো সবাই জানে। কিন্তু এই ভোকাল কর্ডটা থাকে কই? থাকে হচ্ছে, গলার শেষপ্রান্তে একটি বাক্স আকৃতির স্থানে। যাকে বলে ল্যারিংস। তো ঐ ভোকাল কর্ডখানা গলার এতোটা ভেতরে যাওয়ার কি দরকার ছিলো? মুখের শেষে জায়গার তো অভাব নেই, ওখানেই চেপেচুপে বসে গেলেই চলতো। তা না করে অতো হ্যাঁপা। কারণ আছে, ঐ ইঞ্চিদুয়েক নিচের জায়গাটাতে থাকার কারণেই আমরা অন্য প্রানীদের থেকে বেশি নানা ধরনের আওয়াজ করতে পারি। নিজের মাথাটাকে কি বাদ্যযন্ত্র মনে হচ্ছে? ব্যাপারনা, ওরকমই ধরে নিন আপাতত।

কিন্তু এই যে কারিগরী, তার কিন্তু সমস্যাও আছে। শ্বাসনালীর সাথে একই জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় যেকোনো সময় খাবার আটকে যায় ওখানে। আর শুরু হয় বেদম কাশাকাশি। আমরা জানি, গলার ভেতরে আছে দুইটা নলাকৃতির অংশ। একটা হচ্ছে, Esophagus, এটা খাদ্য বহন করে পরিপাকতন্ত্রে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। অন্যটা ল্যারিংস, যেটা বায়ু বহন করে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। যেহেতু ল্যারিংস কিছুটা নিচে অবস্থিত যাতে আমরা নানাধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে পারি, তাই আমাদের শ্বাসনালী সরাসরি দেহের সায়নুস এর সাথে যুক্ত হতে পারেনা। হতে পারলে, গলায় একখানা আস্ত ডিম আটকে গেলেও আমরা ঠিকই শ্বাস নিতে পারতাম আরামসে। বরং এই দুই নল একইসাথে গাদাগাদি করে ছোট একটা জায়গা দখল করে রাখে। আর তাতে একটা ছোট ভাতের দানা প্রবেশ করলেও আমাদের বারোটা বেজে যায়।

esophagus_front

[দেখে নেই কিভাবে আছে সব কিছু]

larynx_structure

[ল্যারিংসই বা বাদ যায় কেন]

এখন ভাবছেন, কি হারামীপনা করে রেখেছে শরীরে!! উহু, হারামীপনা নয়, একটু সাবধানে খেলেই তো হলো। আর ঐ যে, বিষম খাওয়া, ওটা নাহলে দেহের আরো ক্ষতি হতো। বিষম খাওয়া দেহের এস্পিরেশন নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী সুরক্ষা ব্যবস্থা। এস্পিরেশন নিউমোনিয়া হচ্ছে, শ্বাসনালি কিংবা ফুসফুসে কোনো বাইরের জিনিস প্রবেশের ফলে এদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। দেখেছেন তো বিষম না খেলে কি অবস্থা হতো? বিবর্তন একেবারে ভাতে মেরে রেখে যায়নি ঠিকই। তাই খাওয়ার সময় একটু মনোযোগী হলেই কিন্তু আর বিষম খেয়ে ভীষণভাবে কাশতে হয়না। আর এই একটু অসুবিধের বদলে যে এতো সুন্দর করে প্রেমিকার কথা শুনতে পাচ্ছেন এটাই বা কম কিসের!! কথা বলার ক্ষমতা না থাকলে কি হতো ভাবুন, ফোন কোম্পানিগুলো তখন কি করতো, "দুরে গিয়ে, কাছে থাকুন বলে" চেঁচিয়ে উঠতো কারা? তাই ঠিক ভাবে খেতে শিখুন, শান্তিতে বাঁচুন।

[b]৪. গর্ভবতী নারীদের মর্নিং সিকনেস হয় কেন?[/b]

মর্নিং সিকনেস, যেকোনো গর্ভবতী নারীকে প্রশ্ন করুন। ঠিক উত্তর পাবেন কি ভীষণ বিরক্তিকর সমস্যা এটা। সবাই কয়েক মাসের জন্য হলেও এই সমস্যায় পড়েন গর্ভের প্রথম দিনগুলোতে, বিশেষ করে প্রথম দুই-তিন মাস। শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ নারী নিজের প্রথম তিন মাসে এইরকম বমি-বমিভাব অনুভব করেন। শুধু তাই নয়, খাদ্যের এই অস্বাভাবিক নিঃসরণ-এর কারণে অনেকেই পানি স্বল্পতায় ভুগে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হন।

pregnant-woman-with-morning-sickness

কিন্তু এই সমস্যার কি কারণ? আদিম মানুষদের যখন রান্না করে খাওয়ার মতো অবস্থা হয়নি তখন কাঁচা ফল-মূল/মাংস খেয়েই জীবনধারণ করতে হতো। কিন্তু এই সব খাদ্যের সাথে অনাগত অতিথির মতো দেহে প্রবেশ করতো বিভিন্ন ধরনের পরজীবি। পরজীবিদের নিয়ে লিখতে গেলে আলাদা একখান পোস্টের প্রয়োজন। তাই চাইলে, আপাতত এই লিঙ্কটাতে গিয়ে উনাদের দর্শন করে আসুন। দেখবেন কি বাহারি তাদের রূপ। তো এইসব পরজীবি যদি দেহে প্রবেশ করে সবকটাকে তো আর দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা কিলিয়ে ভূত বানাতে পারেনা, তো কয়েকটাকে লাথি দিয়ে দেহ থেকে বের করেও দিতে হয়। আর এজন্যই আমাদের দেহে আছে একটি "কিক-এস" সুরক্ষা ব্যবস্থা। আর সেটি হচ্ছে এই বমন প্রক্রিয়া।

parasites16

[দেখো, রূপের কি বাহার আমার!]

তো গর্ভের প্রথম তিন মাসে যখন ভ্রুণ সব থেকে স্পর্শকাতর অবস্থায় থাকে, যখন তার সুরক্ষার দরকার সব থেকে বেশি, তখন দেহের এই সুরক্ষা ব্যবস্থা আপনা থেকেই দেহের ভেতরে অনুপ্রবেশকারী এই সব অনাগত অতিথিকে লাথি মেরে বের করে দেয় যাতে আপনার আগত প্রিয় অতিথিটি থাকে সুরক্ষিত এবং সুস্থ। তাতে মায়েদের একটু কষ্ট হয় বৈকি, কিন্তু আগত শিশুটির কথা চিন্তা করে অতটুকু কষ্ট নাহয় সহ্য করে নেয়া গেলো। মর্নিং সিকনেস নিয়ে বিস্তারিত আরও জানতে ঘুরে আসতে পারেন এখানে। আর এই ঘুরে আসার ফাঁকে বিবর্তনকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেননা যেনো, এই দারুন একটি "কিক-এস মর্নিং" আপনাকে উপহার দেয়ার জন্য!

[b]৫. একবার ভাঙিলে মেরুদন্ড হয়না সোজা আর, কেন?[/b]

কোনো এথলেটকে দেখেছেন নিজের পিঠের যন্ত্রনায় হঠাৎ মাটিতে শুয়ে পড়তে? দেখবেন, উপস্থিত চিকিৎসকরা হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে স্ট্রেচারে করে তুলে আনছে তাকে। আর স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক উঠে দাড়িয়ে পড়েছে একই চিন্তায়, "যেনো মেরুদন্ডের আঘাত না হয়, প্লিজ"। কিংবা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মেরুদন্ড ভেঙ্গে গিয়ে চিরজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যেতে দেখেছেন বা শুনেছেন। অনেকেই সাড়া জীবনের জন্য প্যারালাইসিস হয়ে থাকেন শুধু মাত্র একটি আঘাতের ফলে। কেন এই সমস্যা? আমাদের হাড় ভাঙ্গলে তো আরামসে জোড়া লাগে তাহলে মেরুদন্ডের বেলায় কেন সেটা হয়না? হ্যাঁ, এটা বিবর্তনের ফসল।

মেরুদন্ডের সাথে আমাদের নার্ভ সিস্টেম সরাসরি জড়িত তাই দেহের এই অংশটির গতিবিধি একটু জটিল। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, প্রাণী জগতে এরকম অনেক প্রজাতি আছে যাদের হাড় ভাঙ্গলে খুব দ্রুতই জোড়া লাগে এমন কি মেরুদন্ড সংলগ্ন হাড় প্রতিস্থাপিত হওয়ার উদাহরণও আমাদের পৃথিবীতে আছে। এমন একটা প্রজাতি কিন্তু আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায় আর টিকটিক করে লেজ নাড়িয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়। হ্যাঁ, সেই আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় গিরগিটি/টিকটিকি। এরা কিন্তু বিবর্তনের ফলে দারুন একটি উপায় আত্মস্থ করেছে। শিকারী প্রাণীকে দিকভ্রান্ত করার জন্য এরা নিজের লেজটি খসিয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি তাদের মস্তিষ্কের সাথে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়ও ৩০ মিনিটের বেশি নড়াচড়া করতে থাকে কোনো রক্তপাত ছাড়াই। আর এই তিড়িংবিড়িং করা অংশটি দেখে শিকারী প্রাণী ভাবে এটিই তার শিকার আর ততক্ষণে পগারপার গিরগিটি মহাশয়। আবার কিছুদিনের মাঝেই সেই লেজের অংশটি আবার গজিয়ে উঠে আগের মতো করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে কেন এরকম হয়না?

ency117regene002


প্রথমত মানুষের মস্তিষ্কের গঠন জটিল। এই জটিল গঠনে জড়িয়ে আছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা। তৈরী হয়েছে নার্ভাস সিস্টেম। আর এই সিস্টেমে মস্তিষ্কের নিউরনের সাহায্যে তথ্য আদান প্রদান হয় সাড়া শরীরে। আর এই জটিল তারের নেটওয়ার্কটি মেরুদন্ডের সাহায্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। একবার ভাবুন, অতো ছোট খুলিতে ২.৫ বর্গফুটের মস্তিষ্কের গঠন কতোটা জটিল হওয়া সম্ভব!

human_brain

তাই কোনো নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে হুট করেই আবার নিজেরা আগের মতো করে তৈরী হয়না। কিন্তু সব নার্ভের ক্ষেত্রেই এরকম নয়, কিছু কিছু নার্ভ ঠিকই আগের মতো নিজেদের প্রস্তুত করে নেয় দুর্ঘটনার পরে। এদের জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজনও পরে না, বড়জোড় কয়েক বাটি চিকেন স্যুপ আর কয়েকটা গ্রুপ-হাগ আর টেডি বিয়ার! কিন্তু এইসব জায়গায় যেসব নার্ভ ওস্তাদের মতো ঘাপটি মেরে বসে আছে তাদের ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা আলাদা।

spine7

মস্তিস্কের এইসব নার্ভের সাথে দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জড়িত। তাই এদের নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নকশা (না, লাফানোর দরকার নেই এই নকশা সেই বুদ্ধিমান কর্তার নকশা নয় রে বাবা) অনুসরণ করে আমাদের মস্তিস্ক। বলা যায়, প্রতি দেহে মাত্র একটিমাত্র সুনির্দিষ্ট "ব্লু-প্রিন্ট" (হ্যাঁ, এটা নীল-নকশা, কোনো ইয়ে নয়) যোগান দেয় এটি। যাতে কোনো নার্ভ হঠাৎ করে বেখাপ্পা ভাবে বেড়ে গিয়ে পুরো নেটওয়ার্কে ঝামেলা না পাকাতে পারে। তাই এই অত্যন্ত জটিল এবং নির্দিষ্ট কঠিন নকশার বাইরে এই গুরুত্বপূর্ণ নার্ভগুলো নিজেদের দ্বিতীয়বার প্রস্তুত করতে পারেনা। আর তাই মেরুদন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হলে মস্তিস্ক এই নার্ভগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হয়। মানুষ প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

spine3

মস্তিষ্কের এসব আচরণ নিয়ে এখনও চলছে বিস্তর গবেষণা। একবার ভাবুন, আমাদের মস্তিষ্কে আছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন। না না এখনই নিজেকে মহান ভাবার কিছু নেই, একখান অক্টোপাস এরও আছে ৩০০ মিলিয়ন। ওরাই বা কম যায় কিসে?

এরই মাঝে যারা বর্ণভিটা খেতে খেতে ব্রেন নিয়ে নিজেদের ব্রেন এর চাকা বনবন করে ঘোরাতে চান তারা চলে যান এখানে|


তবে আজকের মতো "বিবর্তন" সংক্রান্ত বকবক এই পর্যন্তই থাক। এই পাঁচ-পাঁচটি বড় বাঁশ খাওয়ার পরে, সামলাতেও তো একটু সময় লাগে নাকি? সবাই এই যাত্রায় সামলে উঠতে থাকি তারপরে না হয় আর এক শুভদিনে আরও কিছু [s]বাঁশ [/s] তথ্য নিয়ে আসবো। আর "জোকার নায়েক ফ্যানক্লাব" এর অতি উত্সাহী মুমিন বান্দাদের জন্য একখানা পুরনো ভিডিও আমার তরফ থেকে উপহার স্বরূপ আরেকবার।



বাকিরা আশা করি "মিসিং লিঙ্ক" আর "মিসিং গ্রে-মেটার" এর পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা রাখেন।

আডিওস।















No comments:

Post a Comment