Sunday, July 22, 2012

কাক কিংবা শকুনের গল্প


কতগুলো কাক রাস্তার পাশের নিচু দেয়ালটায় বসে আছে। গেট থেকে বের হয়েই কাকগুলোকে দেখে আঁতকে উঠলেন আনোয়ার সাহেব। তার আঁতকে উঠাটা চোখে পড়ল বাড়ির দারোয়ানের।

“স্যার, কিছু হইছে?”

আনমনে মাথা নেড়ে অন্যমনস্ক হয়ে একটা রিকশায় চড়ে বসলেন তিনি। রিকশাটা এগিয়ে চলতে শুরু করতেই পেছনে ঘুরে আবার কাকগুলোকে একবার দেখলেন।

নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকলেন অফিসে বসে। কাক একটা দেয়ালে বসে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক, বসে থাকতেই পারে। এতে চমকে উঠার কি আছে। নিজের মন থেকে চিন্তাটা দূর করার চেষ্টা করেও লাভ হলোনা। তার মনে হতে থাকলো, তার সামনের টেবিলে বসে কাকগুলো রক্তচুক্ষ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দিনের বেলাতেও তার কেন জানি একধরনের ভয় হতে থাকলো। অফিসের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলো। মুছতে গিয়েও হাত উঠলোনা।


ঘটনাটার শুরু কয়েকদিন আগে থেকে। তিনি লক্ষ্য করলেন যখনই তিনি আশেপাশে তাকাচ্ছেন প্রায়শই শকুন এর ঝাঁক দেখতে পাচ্ছেন। তিনি প্রথম প্রথম আমলে নেননি ব্যাপারটা। একটা সময় জিনিসটা অস্বাভাবিক লাগা শুরু করলো। ঢাকা শহরে রাস্তা-ঘটে ময়লা পড়ে থাকে, শকুন কিংবা কাক এর মতো পাখি আশেপাশে ঘোরাফেরা করতেই পারে। তার বাসার আশেপাশে গাছপালাও যেনো একটু বেশি। কিন্তু যখনই আকাশে তাকাচ্ছেন ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে পাখিগুলো। খুব ভালো করে ভেবে দেখলেন কিছুদিন যাবৎ তিনি আর অন্য কোনো পাখিই দেখতে পাচ্ছেননা। কিন্তু শকুনের সাথে যোগ হয়েছে কাক কিংবা চিল।

হয়তো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন দেখলেন পাশের বাগানটায় যে বড় গাছটা, তাতে প্রচুর কাক এর জটলা। কখনো বাজার করে ফিরছেন, মনে হচ্ছে একদল চিল তাকে লক্ষ্য করেই বারবার উড়ে এসে সাই করে মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভাবলেন হয়তো এবছর এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরে ধীরে ধীরে ভয় পেতে শুরু করলেন যখন দেখলেন রাতের বেলাতেও তিনি এদের তার আশেপাশেই দেখতে পাচ্ছেন। একটা সময় মনে হলো পাখিগুলো তার প্রতি পদক্ষেপ নজরে রাখছে। নিজের সন্দেহ নিজেই হেসে উড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক হতে চাইলেন। কিন্তু পারলেননা। এখন তার মনে হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে শকুন কিংবা কাকগুলো তার পেছনে সর্বদাই লেগে আছে।

এই ধারনাটা এক ছুটির দিনে সকালে নাস্তা করতে করতে বলতে গেলেন নিজের স্ত্রীকে। তার স্ত্রী মাত্রই সকালের খবরের কাগজটা খুলেছে। তার অর্ধেক কথা শুনেই তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। স্ত্রীর মুখভঙ্গি দেখে বাকিটুকু বলার আর সাহস পেলেন না। চুপচাপ বাজারের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু ঝামেলা শুরু হলো সেদিন বিকেলে, হঠাৎ তার ছোট ভাই এসে হাজির বাসায়। এসেই নানা কথার মাঝে বলে বসলো, “ভাইয়া, এক কাজ করুন না, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে, ভাবিকে সঙ্গে করে কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। মনটাও ভালো লাগবে। এভাবেই শহরের যা অবস্থা। নোংরা-পলিউশন। আর অনেকদিন একজায়গায় থাকলে মানুষের মনেও চাপ পড়ে বলে শুনেছি। তাই মাঝেমধ্যে দু-একটা ট্রিপ ভালোই।” কথাটার উত্তর দিতে গিয়ে চোখ পড়ল তার স্ত্রীর উপরে। বুঝতে বাকি রইলোনা সকালের কথাবার্তাটা শুধু তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এরপরে আর কাউকে কিছু বলতে চাননি।


কিন্তু আজকে যখন অফিসে বসে সকালের কথাটা ভাবছিলেন, মনে হলো একজন মনোরোগবিশেষজ্ঞ দেখালে কেমন হয়। ক্ষতি তো নেই। ভাবতে ভাবতে নিজের এক কলিগকে কথাটা বললেন। তবে ঘুরিয়ে, জানালেন যে তার এক আত্মীয়র দরকার। ঢাকায় ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কে আছেন আজকাল, জানতে চাইলেন নিজেকে স্বাভাবিক রেখে। একটা নামও পেলেন সাথে ফোন নাম্বার।



তিনি এখন দাড়িয়ে আছেন ডা: ইকবাল হোসেন এর চেম্বারের সামনে। বাইরে থেকে দেখেই মনে হচ্ছে বেশ বড় ডাক্তার। জায়গাটা বেশ পরিপাটি গোছানো, আভিজাত্যের ছাপ। একবার ভাবলেন কি দরকার, অযথা কতগুলো টাকা নষ্ট। আবার ভাবলেন দিন সাতেক আগে ফোন করে এপয়েনমেন্ট নিয়েছিলেন। না গেলে কেমন দেখায়। আবার ভাবলেন, একবার দেখাই যাকনা কি সমস্যা। ভাবতে ভাবতে পেছনে “কা-কা-কা”, শব্দটা শুনেই আর দেরি করলেননা, সোজা ভেতরে ঢুকে পড়লেন কোনো দিকে না তাকিয়েই।

তরুণ ডাক্তার, খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলেন। হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন কিছু। স্বাভাবিক প্রশ্ন, এই যেমন, কতো বয়স, কিরকম ডায়েট মেনে চলেন, কোনো ধরনের নেশার অভ্যাস, এইসব। এরপরে বেল বাজিয়ে চা দিতে বললেন। আনোয়ার সাহেব এর একটু অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে তার চলে যাওয়া উচিত ছিলো। এবার ইকবাল হোসেন মুখ খুললেন,

“আপনার ছেলেবেলায় এমন কোনো ঘটনা আছে কি যাতে আপনি কোনভাবে পশু-পাখির মাধ্যমে আতঙ্কগ্রস্থ হয়েছিলেন?”

প্রশ্নটা শুনে কিছুটা সময় নিলেন তিনি, মনে মনে ভাবলেন, একবার গ্রামের মাঠে খেলতে গিয়ে গরুর গুঁতো খেয়েছিলেন অসাবধানতায়। সেটাকে কি আতঙ্ক বলা চলে? এটা কি ডাক্তারকে বলা উচিত হবে? তারপর বলার ইচ্ছাটা বাদ দিয়ে উত্তর দিলেন না সুচক।

“আচ্ছা ছোটবেলায় কোনো পাখি শিকারের ঘটনা?”

তিনি ভাবলেন, ছোটবেলায় গুলতি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছেন অনেক, অযথা প্রাণী হত্যা কখনো করেননি। তাই এবারও উত্তর দিলেন, “না”।

“আপনি কি একা একা থাকাই পছন্দ করেন নাকি বন্ধু-বান্ধব আছে মোটামুটি?”

“একা থাকা কিনা বলতে পারবোনা, কিন্তু ঝামেলামুক্ত থাকি, খুব বেশি বন্ধু-বান্ধবও নেই এই বয়সে।”

কিছুটা চুপ থেকে ডাক্তার বললেন, “আপনি যে পাখিগুলোর নাম বললেন তাদের সবাই মৃতভোজী। এই একটা বৈশিষ্ট্য কমন। বিশেষ করে শকুন অনেক দূর থেকে তার খাদ্যের গন্ধ পায়। অনেক সময় মৃতপ্রায় প্রাণীর মাথার উপরে চক্কর কাটতে থাকে। কিন্তু আর কোনো পাখি বাদ দিয়ে এই একটি বিশেষ ধরনের পাখি দেখার কারণ হয়তো তেমন কিছুই নয়, পুরোটাই স্বাভাবিক। হয়তো আশেপাশে এদের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েও থাকতে পারে। এভাবেও রাস্তায় আবর্জনার স্তুপ যত্রতত্র পড়ে থাকে। আপনি হয়তো খুব ভালো করে লক্ষ্য করছেন দেখে চোখে পড়ছে। অন্যরা হয়তো এতোটা খেয়াল করছেনা।”

কথাটায় সায় জানালেন আনোয়ার সাহেব নিজেও। এরপরে দু-চারটা টুকিটাকি কথা বলে দুটো ওষুধের নাম নিয়ে বিদায় নিলেন তিনি ডাক্তারের কাছ থেকে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ডাক্তার বললেন তাকে বেশি চিন্তা না করতে আর এই ব্যাপারটা নিয়ে না ভেবে নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে। ভালো করে ঘুমাতেও বলে দিলেন।



আজ মঙ্গলবার, সকালে অফিসে যাননি তিনি। বারান্দায় চেয়ারে বসে পেপার পড়ছেন। আগের দিনের একদলের রাজনৈতিক সভায় গন্ডগোল হয়েছে। কেউ একজন হাতবোমার আঘাতে মারাও গেছে। বিরোধীদল সেই ব্যক্তিকে নিজের দলের সংগ্রামী নেতা দাবি করে হরতাল ডেকেছে সাথেসাথেই। এদিকে সরকারী দল বলছে, ঐ ব্যক্তি তাদের কর্মী। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, সাধারণ পথচারী। সেই পুরনো ঝামেলা। রাজনীতি আর মিডিয়ায়, জিন্দার থেকে মুর্দার কদর বেশি। ভাবতে ভাবতে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়েছিলেন। হঠাৎ ডানা ঝাপটানোর শব্দে চমকে উঠে হাতের কাগজটা নামাতেই দেখলেন বারান্দার কার্নিশে সার বেঁধে বসে আছে অনেকগুলো কাক। আর সবগুলোই লাল টকটকে চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি হুশ হুশ শব্দ করে হাতের কাগজটা নাড়াতে লাগলেন কিন্তু পাখিগুলো নড়লোনা।

“কি হলো”- পেছনে স্ত্রীর কন্ঠস্বর শুনে মনে হলো হার্ট-এটাক হয়ে যাবে তার, এতটাই ঘাবড়ে গেলেন।

“কই, কিছু নাতো”।

“কিছুনা !! স্পষ্ট দেখলাম পত্রিকাটা হাতে নিয়ে মুখে কি বলে চলেছ !”

“না, না কই”, মুখ ঘুরিয়ে কার্নিশের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলেন, একটা কাকও নেই!!

কতক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভেতরে চলে গেলো তার স্ত্রী।

সারাদিন খুব বেশি কথা হলোনা তাদের মাঝে। কিন্তু তিনি দেখলেন তাকে বেশ পরখে রাখা হচ্ছে। তিনি একবার হেসে তাকে আশ্বস্ত করতে গিয়েছিলেন, কোনো কাজ হলোনা।

বিকেলে ছাদে ঘুরতে গেলেন আনোয়ার সাহেব। ছাদের কোনায় দাঁড়ালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। সামনের রাস্তাটা আজকে মোটামুটি ফাঁকা। গলির মোড়ের চায়ের দোকানের ঝাপ খোলা থাকলেও কোনো ভিড় নেই আজকে, পাড়ার দুএকজন বসে বসে কথা বলছে। কি মনে হতে ঘুরে আকাশের দিকে তাকালেন, অবাক হলেননা, দেখতে পেলেন, মাথার উপর চক্কর কাটছে কয়েকটা শকুন। তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নামতে গিয়ে দেখলেন ছাদের এক কোনে, একটা বেশ বড়সড় শকুন বসে আছে। ধারালো ঠোঁট আর অদ্ভুত ভয় লাগানো চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে একনজরে। দ্রুত ছাদের দরজা বন্ধ করে নিচে নেমে এলেন তিনি।


গভীর চিন্তায় ডুবে আছেন আনোয়ার সাহেব। কি হচ্ছে এসব তার সাথে। আর তার সাথেই বা কেন? ডাক্তার বলছিলো, মৃতপ্রায় প্রাণীর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় এই পাখিগুলো। তাহলে কি তিনি মারা যাচ্ছেন। আর সেটা কোনভাবে টের পেয়েছে এরা! তিনি দেখেছেন, পশু-পাখির অনেক ক্ষমতা থাকে। এরা অনেক জিনিস বুঝতে পারে। তাহলে কি তিনি খুব বেশিদিন বাঁচবেননা? মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো তার। সারাজীবন খুব সাধারণ ভাবে কাটিয়েছেন, এই শেষ বয়সে এসে অযথাই কেন এসব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাকে বুজতে পারছেননা।

ভাবতে ভাবতে টিভিটা খুললেন, চ্যানেল থেকে চ্যানেল ঘুরতে লাগলেন। একটা খবরের চ্যানেলে এসে স্থির হলেন। দেখলেন, দেশের স্বনামধন্য একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। খবরটা শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আজকাল অনেক বড় মাপের মানুষই বিদায় নিচ্ছেন দুনিয়া থেকে। টিভিটা বন্ধ করে দিলেন তিনি, চুপচাপ বসে রইলেন চোখ বন্ধ করে।


আজকে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় একটা কাকও দেখলেননা তিনি। অবাক হয়ে গেলেন। আকাশে তাকিয়ে দেখলেননা একটাও শকুন। তাজ্জব ব্যাপার। তাহলে কি এতদিন মনের ভুল ছিলো?

অফিসে বসে সকালের পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন। একটু পরেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো আবার। কালকে রাতে যিনি মারা গেছেন তাকে নিয়ে অজস্র সংবাদ হয়েছে আর একটা কথা বারবার ঘুরে ফিরে আসছে তাকে কোথায় সমাহিত করা হবে। এই নিয়ে তর্কে মেতেছে সংবাদপত্রগুলো। ভেবে অবাক হলেন, এই নিয়েও তর্ক করে চলেছে সংবাদপত্রগুলো !! ভেতরের পাতায় কয়েকটা বিশেষ কলামের বিষয়বস্তু দেখে মনে মনে ভীষণ রেগে গেলেন তিনি। খ্যাতনামা মানুষটির জীবদ্দশার নানা কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সাথে ইচ্ছে মতন কিছু ঘটনা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অযাচিতভাবে। অযথা মানুষটিকে একটা বিতর্কের মাঝে আনার চেষ্টা চলছে। এর পেছনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেননা তিনি। কিন্তু সারাদিনের জন্য মনটা বিষন্ন হয়ে রইলো।


বিকেলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় বের হতেই অবাক হয়ে গেলেন। অফিসের রাস্তাতে আশেপাশের বাড়িগুলোর দেয়ালে দেয়ালে অজস্র কাক।তিনি দ্রুত একটা রিকশা ডেকে চড়ে বসলেন। দেখলেন কাকগুলোর মাঝে একটা আলোড়ন তৈরী হয়ে গেলো। কয়েকটা উড়ে রিকশার পিছু নিলো। তিনি রিকশাওয়ালাকে গতি বাড়াতে বললেন। পেছনে ফিরে দেখলেন অসংখ্য কাক তার পেছনে উচ্চস্বরে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলেছে। তিনি রিকশার চালককে অবাক করে দিয়ে চলন্ত রিকশা থেকে লাফিয়ে কোনমতে নেমে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে চললেন। পেছনে তাড়া করে চললো পাখিগুলো। দৌড়াতে দৌড়াতে দেখলেন মাথার উপরে কিছুটা ছায়া হয়ে এলো। চোখ উঠাতেই দেখলেন আকাশ অন্ধকার করে প্রচুর শকুন আর চিলের মেলা। তিনি দৌড়ে চলেছেন, মনে হচ্ছে বাড়ি পৌঁছাতে পারবেননা আর। আতংকিত হয়ে খেয়াল করলেন এখন কাকগুলো তার প্রায় কাঁধের কাছে ডানা ঝাপটাচ্ছে। আপনা থেকেই অমানুষিক একটা চিৎকার বেরিয়ে এলো মুখ থেকে তারপর হঠাৎ গতি সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে রাস্তার উপরে পড়ে গেলেন। তাকে ঘিরে ধরলো অজস্র কাক আর শকুন। চোখের সামনে থেকে দিনের আলোটা নিভে গেলো।


ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলেন আনোয়ার সাহেব। সাড়া শরীর কাঁপছে তার। গলা শুকিয়ে কাঠ। নিজের বুকের ভেতরের শব্দ এতো জোরে শুনতে পাচ্ছেন মনে হচ্ছে পাশেই শুয়ে থাকা স্ত্রী জেগে উঠবেন এই শব্দে। কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলেন পাশে রাখা জলের বোতলটা, হাতে লেগে নিচে পড়ে গেলো কাগজটা। উঠিয়ে রাখতে গিয়ে আবারও চোখে পড়ল সেই সংবাদের হেডলাইনগুলো।

তিনি আনমনে ভাবলেন, কি অদ্ভুত এই সমাজ। মরেও শান্তি নেই এখানে।

আস্তে করে শুয়ে পড়লেন আবার।


No comments:

Post a Comment