Tuesday, November 13, 2012

জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন

গত কিছুদিন ধরে জামায়েতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির সারাদেশে যে সহিংসতা-তান্ডব চালিয়েছে তার সচিত্র খবরগুলো দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি।

বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জন করতে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে যে পরিমান ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তার সমতুল্য আর কোন ইতিহাস পৃথিবীর বুকে এখনও রচিত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এই দেশের সাধারণ মানুষ লড়াই করেছিল পাকিস্তানের সুশিক্ষিত ভারী সমরাস্ত্র সজ্জিত সেনাবাহিনীর নরপশুদের বিরুদ্ধে। এই লড়াই এই দুই পক্ষের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে হয়তো আর দশটা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো এই ইতিহাসকেও বিশ্লেষণ করাটা সহজ হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের দেশের জনগনকে লড়তে হয়েছে এ দেশীয় কিছু বেজন্মার বিরুদ্ধেও। যারা এদেশের আলো-হাওয়াতে পরিপুষ্ট হয়ে ধর্মের নাম ভাঙিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন করেছিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে। এই রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস গোষ্ঠী পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করতে গিয়ে গলায় ছুরি চালিয়েছিল এদেশের জনগনের। গনিমতের মাল সাপ্লাই এর দায়িত্ব নিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন ক্যাম্পগুলোতে। কারণ পবিত্র যুদ্ধের নামে সব জায়েজ।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক মদদপুষ্ট এই দেশদ্রোহী গোষ্ঠীর কর্মকান্ডের সময় হিটলার বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো গোলাম আজম, সাইদী, নিজামী এসব ষড়যন্ত্রকারী দেশদ্রোহীর কাছে দীক্ষা নিতে আসতেন। পাকিস্তানি বাহিনী যখন বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত ভাবে ধ্বংস করে যাচ্ছিল, যখন সদ্য স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়া দেশের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে তাকে পঙ্গু করে দেয়ার উদ্দেশ্যে নারকীয় তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছিল তখন তাদের আশির্বাদপুষ্ট এই রাজাকারবাহিনী এদেশের মানুষকে হত্যা করার পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবেই মেধাশুন্য করে চিরদিনের মতো বিকলাঙ্গ করে দেয়ার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। বিধর্মী ও কাফের হত্যার মহান দায়িত্বে নিয়োজিত এই খুনির দল যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে পরিকল্পনার ছক অনুযায়ী দেশের বুদ্ধিজীবি ও প্রথম সারির আন্দোলনকারীদের হত্যা করে তাদের স্মৃতি দেশের মানচিত্র থেকে মুছে দেয়ার কর্ম সম্পাদন শুরু করে। তাদের চরম আঘাত ছিলো ১৪ই ডিসেম্বরের মাত্র এক রাতের মাঝে দেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবিকে বধ্যভূমিতে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা। তাদের এই পরিকল্পনার প্রধান কারণ ছিলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী শুভ বুদ্ধির অসাম্প্রদায়িক মানুষগুলোকে হত্যা করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের রক্তস্নাত জন্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ রাখা, যাতে স্বাধীন ভূখন্ড অর্জনের পরেও বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হতে না পারে। স্বাধীনতার পরে যেসব মানুষের হাতে দেশকে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হতো তাদের হত্যা করে বাংলাদেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে এবং দেশের নতুন প্রজন্ম যেন সত্যিকারের ইতিহাস সম্পর্কে সবসময় সাংঘর্ষিক মতবাদ এবং ধোঁয়াশার মাঝে থাকে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে তারা। বাংলাদেশের সাধারণ জনগনের কাছে পাকিস্তানিদের হাত থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার দিনটি ১৬ই ডিসেম্বর হলেও, নীল নকশার বাস্তবায়নে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট এই দেশদ্রোহী রাজাকারবাহিনী অশুভ শক্তির যে বীজ বপন করে তারও নিরব জন্ম এই দিনটিতেই। সরব যুদ্ধের শেষ ১৬ই ডিসেম্বর হলেও নিরব যুদ্ধের শুরুও এই দিনটিই। মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গাটিতে শুন্যস্থান তৈরী করে দিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশটিকে পরিকল্পিতভাবে তারা বিক্ষুব্ধ একটি ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করে দ্বন্দ-বিক্ষুব্ধ অনেকগুলো বছর। একদিকে যেমন ছিলো যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের সামগ্রিক পুনর্গঠন এর চাপ অন্যদিকে ছিল বহির্বিশ্বে পাকিস্তান কর্তৃক অপপ্রচারের চাপ। একইসাথে দেশে তখন বিভিন্ন শ্রেণীতে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠছিল। রাজনৈতিক পরিমন্ডলের সাথে সামরিক বাহিনীর স্নায়ুযুদ্ধ ছিলো এমনই একটি। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে সুযোগসন্ধানীর কোন অভাব তখন ছিলোনা। আর যুদ্ধের ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত জীবনে তখন রাজনৈতিক-কূটনৈতিক আলোচনা বাতুলতা মাত্র। দেশের এই সময়টি ছিল দেশদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে স্বর্ণখনির মতো। তারা পরিকল্পনামাফিক তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে গেছে নিরবে আর তাতে জড়িয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলে। আর দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ক্ষমতার দ্বন্দ তাদের এনে দিয়েছিল সেই অবারিত সুযোগ।

ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশকে পরাধীনতার শেকলে আবার আবদ্ধ করে যায় খুনি সেনা সদস্যরা। আর সুবর্ণসুযোগ উন্মোচিত হয় দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে। তাদের নিরব উত্থান তখন যথেষ্ট সুসংহত। একটি স্বাধীন মানচিত্র পাওয়ার সাথে সাথেই এই মানচিত্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, গদি নিয়ে খামচা খামচির কারণে সেদিকে খুব একটা নজর না দিলেও তখন আকর্ণবিস্তৃত হাসি হেসেছিল কিন্তু এই স্বাধীনতাবিরোধীরাই। দেশের চার কান্ডারিকে হত্যা করে কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়েছিল সে সময়ে। সংবিধান পরিবর্তন করে যখন দেশের নব্য শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতা বিরোধীদের পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় তখন আসলে চিন্তা করতে কষ্ট হয় ঠিক কি কারণে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল এই দেশের মানুষগুলো। দেশের রাজনীতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে দ্বিধাবিভক্ত সমাজকে আরও বিভক্ত করে দেয়া এই পরিকল্পনারই অংশমাত্র। স্বাধীনতা পরবর্তিতে ৭৫ এর পরে দেশকে অতিক্রম করতে হয়েছে অনেকগুলো সরকার যেগুলো পারতপক্ষে কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেনা। দেশের সার্বভৌমত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিকভাবে সমাজতন্ত্র এই মূল চেতনাগুলো এই সরকারগুলো বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট ছিলোনা কখনোই। অবশ্য পরিকল্পনাতেই ছিলোনা এই ধারনাগুলো। বরং স্বাধীনতাবিরোধীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র এবং অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছিল আমাদের দেশ। দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান তাদেরকে এই সমাজে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাজনৈতিকভাবেই। আর দিন যত এগিয়েছে রাজনীতি আর ধর্মের লেবাসে এরা নিজেদের শক্তিশালী মহীরুহতে পরিণত করেছে। দেশের ইতিহাস ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে যাতে বুদ্ধিজীবি হত্যার মাধ্যমে যে বিকলাঙ্গকরণ প্রক্রিয়ার শুরু হয়েছিল তার ধারা আরও শক্তিশালী হয়।

ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে সমাজকে-জাতিকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা তাতে সফল হয়েছে। দেশকে নিরবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলা স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থান কোন সময়ই থেমে থাকেনি। আর তাদের এই পরিকল্পনা সার্থক হয়েছিল যখন দেশের জনগনই তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতার আসনে বসিয়েছিল। যখন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করেছিল একদা এই পতাকাকে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন করে দেয়া পশুগুলোকেই। তাই সেসময়ে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার বুকে লাথি মারার সাহস দেখিয়েছিল তারা। আসলে লাথি মেরেছিল আমদের বুকে। তাদের মুখে তখন নুরানী ছাপ, ধর্মের ব্যবসা করে অনেকদুর এগিয়ে যাওয়া সেই পশুগুলো মুখোশের আড়ালে তাদের শদন্ত নিয়ে ঘোরাফেরা করে। সাধারণ জনগণ তাদের চিনতে ব্যর্থ হয়, যেভাবে ব্যর্থ হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে।

সাম্প্রদায়িকতা আর বিভক্তির কূটচালে রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট শক্তিশালী দল এখন জামায়েতে ইসলামী আর তাদের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। ধর্মীয় লেবাসে খুনিদের ব্রিডিং গ্রাউন্ড এই অপশক্তির শেকড় আজ অনেক গভীরে। এই শেকড় এনে দিয়েছে তাদের শক্তি॥ দেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের সংহত অবস্থান। তাদের বিষবাষ্পে আক্রান্ত সমাজ পূর্বের মতোই দ্বিধাবিভক্ত। দেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের উত্থান, সংখ্যালঘু হত্যা-নির্যাতন, দেশের সাংস্কৃতিক চেতনার বিরুদ্ধে একের পর এক আঘাত এসবই এর প্রমান। বিগত সরকারের আমলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের শক্তির পূর্ণ ক্ষমতা প্রদর্শন করে দেশকে রক্তাক্ত করেছে অসংখ্যবার। আজকে আবার যখন পূর্ণশক্তিতে এরা দেশে তান্ডবলীলা সম্পন্ন করে তখন বোঝা উচিত আরেকটি পাকিস্তান গড়ার স্বপ্নে বিভোর চক্রটির ক্ষমতা কতখানি। এদের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে পুনর্বাসন করে শাসক জিয়া যেই প্রক্রিয়া শুরু করে গিয়েছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় আজকে তার হাতে গড়া বিএনপি যুদ্ধপরাধী গোষ্ঠীর একটি অংশমাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরগাছার মতো শুরু করলেও আজ ডানপন্থী দলটিকে প্রায় পুরো গ্রাস করে নিয়েছে এরা। অবশ্য পরগাছার বৈশিষ্ট্যও এটাই। বিএনপির যেকোন সমাবেশে যেকোন কর্মসূচিতে সর্বাগ্রে থাকে জামায়েতে ইসলামী। আজকে দেশে লাগাতর অরাজকতা সৃষ্টির জন্য যে ক্ষমতার প্রয়োজন তা এদের আছে এবং তারা বারংবার সেটা ভালোভাবে প্রমান করেছে।

রগকাটা আর জবাই করে হত্যা করার রাজনীতি করে ঘৃণিত ইসলামী ছাত্র শিবির এর সমর্থক আজকে নেহায়েত কম নয়। ইসলাম মানলে শিবির করা উচিত এরকম ধারনায় উদ্বুদ্ধ সংগ্রামী শিবিরকর্মীর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত বছরগুলোতে। আরও আশঙ্কাজনক কারণ এদের অনেকেই তরুণ, এরা ইসলাম আর খুনি শিবিরকে একত্রে মিলিয়ে ফেলে। দেশের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন সগর্বে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠনটি। মধ্যপ্রাচ্যের টাকায় আর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায় জামায়েতের মদদপুষ্ট এই অপশক্তির পুনর্জাগরণ দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত হয়ে ছিল অনেকদিন ধরেই আজকে তারা সেটা ভালভাবেই জানান দিয়েছে। যখন বারবার অভিযোগ উঠেছে এই দলটি যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচালের জন্যই অরাজকতা সৃষ্টি করছে তখন বিরক্তিতে ভ্রুকুঞ্চিত করেছে অনেকেই। কিন্তু আজকে যখন এটা প্রমাণিত সত্য তখন আর এই অভিযোগকে অস্বীকার করার উপায় নেই। দুষ্ট রাখল বালকের মতো বাঘ এলো, বাঘ এলো চিৎকারে বিরক্ত আমরা যখন নিজেদের স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্নে বিভোর তখন বাঘ এসেছে নিরবে, থাবা বসিয়েছে গভীরে আর এর ক্ষতচিহ্ন আমাদের সামনে জ্বলজ্বলে। একইভাবে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠগুলোতে পরিকল্পিতভাবে তারা যেই ষড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়েছিল তাতে অনেকেই যোগ দিয়েছে আর এই প্রজন্ম এখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিপদজ্জনক একটি রাস্তায় অগ্রসরমান। জামায়েত আর শিবির এদেশের ধর্মভীরু মানুষের সবথেকে দুর্বল জায়গাটি নিয়ে চক্রান্ত করেছে আর তাতে তারা পুরোপুরি সফল। আজকে যখন দেশের প্রধান মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বারবার সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে এই অপশক্তি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন দেশের সাধারণ জনগণ ভুলে যায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই জায়গাতেই সাধারণ মুসল্লিরা জুতোপেটা করেছিল গোলাম আজমকে। আজকে দিকভ্রান্ত সাধারণ মানুষ তাদের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য নিয়ে সন্দিহান| ঠিক এতোটাই জঘন্যভাবে আমাদের মূলকে ক্ষতবিক্ষত করেছে জামায়েতে ইসলামী আর ইসলামী ছাত্রশিবির।


আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা জামায়েতে ইসলামীর কূটনীতির কাছে তাদের শিশুতোষ আচরণ নিয়ে আবারও দ্বন্দে লিপ্ত। তারা রমনার বটমূলে বোমা হামলা থেকে শুরু করে রামুর সাম্প্রদায়িক হামলা সব কিছুর জন্য একে অপরকে দোষ দিয়ে খালাস। দেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী সরকার দলের প্রধানমন্ত্রীকে এসব সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য দায়ী করেন আর সরকার দলের বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতে শিবিরকে প্রতিহত করা নাকি তাদের কর্তব্য নয়। আর দ্বিদলীয় পরিবারতন্ত্রের পুরনো এসব কোলাহলের মাঝে তারা ভুলে যান যদি রাজনীতি করার জন্য দেশটাই অবশিষ্ট না থাকে তাহলে গলার জোরে বক্তৃতা করবেন কোথায় দাঁড়িয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্যি দেশের প্রধান দুটো বিরোধীদলই নিজেদের স্বার্থে যে কালসাপকে দুধ-কলা দিয়ে পুষে এসেছে সেই কালসাপ আজকে অজগরে পরিণত হয়ে তাদেরকে পুরো গিলে নিতে সক্ষম। আর এরপরেও ডিম আগে না মুরগি আগে জাতীয় তর্কে সময় নষ্ট করে চলেছে সবাই। যখন নিজেদের জাতিসত্ত্বার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীরা তখন আমরা পূর্বের মতোই দ্বিধা-বিভক্ত এবং অসহায়।


আজকে যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তা দিয়েই তাকে পিটিয়ে আধমরা করে দেয়া হয় কিংবা রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় তখন বুঝতে হয় দেশের লাইসেন্সপ্রাপ্ত গুন্ডারাও কতো অসহায়। ক্ষীনকায় ছাত্রদের পেটে আর পাছায় লাথি মেরে অভ্যস্ত পুলিশ সদস্যরা আজকে দৈত্যের হাতে নিতান্ত শিশু। যখন পত্রিকায় খবর ছাপা হয় সমগ্র দেশে অরাজকতা তৈরিতে বদ্ধপরিকর জামায়েত আর ছাত্রশিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য তখন আমরা আহা উহু করে বিব্রতবোধ করি। কেউ কেউ আবার গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিয়ে এদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হালাল করতে নামে। কিন্তু সবাই একটা মূল কথা ভুলে যাই, যদি এসব বোলচাল চালানোর মতো দেশটাই আমাদের না থাকে, যদি দেশের অখন্ডতা, বাংলাদেশী হিসেবে সামাজিক ঐক্য, অসাম্প্রদায়িকতাই না থাকে তাহলে গণতন্ত্র কিংবা রাজতন্ত্র, তাতে কোন পার্থক্য আসবেনা। আর শুধু তাই নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধীরা, অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ যেই গোষ্ঠী তারা দেশকে আর যাই হোক স্বর্গ বানাতে সক্ষম হলেও তাদের সমর্থন করা জাতি হিসেবে মৃত্যুর সমতুল্য।


আজকে জাতি একটি ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও যে প্রশ্নটি আমাদের মাঝে বিভক্তি এনে দেয় আজকে এই প্রশ্নটির সুরাহা হওয়া সত্যিই বড় প্রয়োজন। আজকে নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন আমরা কি আমাদের মূল্যবান স্বাধীনতার স্বপক্ষে নাকি বিপক্ষে? আমরা কি স্বাধীনতা রক্ষার্থে চরম মূল্য দিতে প্রস্তুত নাকি বিভক্ত হয়ে পরাধীনতার শেকল পড়তে উদ্যত? আমরা কি অসাম্প্রদায়িক জাতিগত ঐতিহ্য রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর নাকি ধর্মের নামে বিভক্ত হয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে আগ্রহী? আমরা কি ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়েতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত নাকি তাদের হাতে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে এগিয়ে যাচ্ছি?


এই প্রশ্নগুলোর কোন সুরাহাই হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ব্যক্তি অবস্থান থেকে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবো। আজকে দ্বিধাবিভক্ত থাকার সময় আর নেই, আজকে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। আমাদের আজকে নির্ধারণ করতে হবে আমরা কি আবার একবার ঐক্যবদ্ধভাবে আরেকটা ৭১ গড়ে তুলতে সক্ষম কিনা। আমি বিশ্বাস করি, ৭১ আমাদের চেতনায়, আমাদের মননে। একে মুছে দিতে সক্ষম হয়নি ঐ যুদ্ধাপরাধীরা, স্বাধীনতা বিরোধীরা। তাই আজকে আর একবার একসাথে উঠে দাঁড়াতে হবে। জাতি হিসেবে হয়তো আমাদের ব্যর্থতা অনেক, অর্জন স্বল্প। কিন্তু সেসবই আমাদের। যখন আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের বিরুদ্ধে আঘাত আসে তখন আর এসব বিবেচনায় বিভক্ত থাকার বিলাসিতা আমাদের মানায় না। ঐক্যবদ্ধ আজ আমাদের হতেই হবে, নয়তো পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের কখনোই ক্ষমা করবেনা।


আর ঠিক এ কারণেই আমি খুশি। যখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখনই হয়তো আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হই। আজ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থানে আমরা একটি বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি। একের পর এক আঘাতে আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। আমরা ঘুরে দাঁড়াবোই। পাল্টা আঘাতে গুড়িয়ে যাবে সব চক্রান্ত এ শুধু আমার বিশ্বাস না, এ আমি জানি।

“নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কতো দূরে। বেশি দূরে হ’তে পারেনা। মাত্র এই রাতটুকু তো! মা ভৈ:। কেটে যাবে।”- আনোয়ার পাশা।






No comments:

Post a Comment